ফুটবল খেলে প্রতিষ্ঠা পাবেন, একসময় এরকম স্বপ্ন দেখেছিলেন। বারাসত যুবক সঙ্ঘ, ইস্টবেঙ্গল, বালি গ্রামাঞ্চল— নানা দলের হয়ে খেলেছেন। প্রতিনিধিত্ব করেছেন বাংলারও। ছিলেন রাইট ব্যাক। বাংলায় মহিলা ফুটবলারদের চাকরির পথটা মসৃণ নয়। তাই মাঠে সাফল্য পেলেও আর্থিক নির্ভরতা পাননি। ২০১৩ সালে খেলা থেকে অবসর নেন। কিন্তু ফুটবলের প্রতি ভালবাসার টানেই থেকে যান মাঠেই। পরের বছর থেকে কুন্তলা ঘোষদস্তিদারের প্রেরণায় কোচিংয়ে চলে আসেন। ২০১৮ সালে এ এফ সি-র ডি লাইসেন্স কোর্সও করেন। কিন্তু এতে পেট ভরছে না রহড়ার শরৎ বোস কলোনির রুমা ঘোষের। ‘বেকার’ শব্দটা ওঁর জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে।


১৯৯২ সালে প্রমথনাথ ঘোষ মারা যান। তখন তাঁর ছোট মেয়ে রুমার বয়স ৭-৮ বছর। সংসারে তখন থেকেই টানাটানি। স্বামী মারা যাওয়ার পর রুমার মা আভারানী ঘোষ ফ্যামিলি পেনশন পেতেন। তাতেই চলত ছেলেমেয়েদের নিয়ে সংসার। আভারানী মারা যান ২০০৬ সালে। সেই থেকে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন রুমা। সংসারের আর্থিক সমস্যার মাঝেও কখনও ফুটবল মাঠে যাওয়া বন্ধ করেননি। ফুটবল খেলা ছেড়ে যখন কোচিংয়ে এলেন বাগুইআটির বিগবাজারে সিকিউরিটি গার্ডের একটা কাজ জুটিয়ে নিয়েছিলেন। ওখানে তিন বছর কাজ করেছেন। তারপর ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে ওই কাজ ছেড়ে কোচিংয়ের টানে চলে যান ছত্তিশগড়ে। ওখানে সুকমা ফুটবল অ্যাকাডেমির উদ্বোধন হয় সেবছর ২৬ জানুয়ারি। শুরুর দিন থেকেই ওখানে কোচ হিসেবে যোগ দেন। ওখান থেকে এসেই ২০১৮ সালে করে যান এ এফ সি-র ডি লাইসেন্স কোর্স। ২০১৯-এর ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুকমা ফুটবল অ্যাকাডেমির সঙ্গে চুক্তি ছিল। সেই মিয়াদ শেষ হওয়ার পর ফিরে আসেন রহড়ার বাড়িতে। তখন থেকেই একবছর হয়ে গেল বেকার। অনেক চেষ্টা করেও আর কোথাও কোচিংয়ের নতুন কাজ পাননি। যখন দু-এক জায়গায় কথাবার্তা একটু এগোচ্ছিল, তখনই শুরু হয়ে যায় লকডাউন।
৩৫ বছর বয়সী এই কোচ এখন ময়দানের মূলস্রোত থেকে অনেকটা দূরে। কিন্তু ফুটবল থেকে, কোচিং থেকে কী করে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখবেন? ছত্তিশগড় থেকে ফিরেই পাড়ার মাঠে কয়েকটা মেয়েকে ট্রেনিং দিতে শুরু করেছেন। রুমা বলছিলেন, ‘অনেক সমস্যার মুখে পড়েছি। কিন্তু লড়াই চালিয়ে গেছি। সবসময় সামনের দিকেই তাকাতে শিখেছি ঝুমাদি-র (কুন্তলা ঘোষদস্তিদার) কাছ থেকে। আশায় আছি, লকডাউন শেষ হলে কোথাও কোচিংয়ের একটা কাজ পেয়ে যাব। ততোদিন কোচিংয়ের অভ্যাসটা বজায় রাখছি পাড়ার মাঠে ওদের নিয়ে।’
আজ শিক্ষক দিবসেও ওদের নিয়ে মাঠে নামবেন রুমা। থাকবেন কোচের ভূমিকায়।
এই ‘বেকার’ কোচকে শিক্ষক দিবসে আন্তরিক শুভেচ্ছা। ভাল থাকুন। লকডাউনের পর আবার আপনি ‘কাজ’ পেয়ে মাঠে ফিরুন।