টোকিও অলিম্পিক আদৌ সামনের বছরও হতে পারবে কিনা, তা নিয়ে এখনও সন্দেহ আছে। তবু বসে নেই ‘পায়োলি এক্সপ্রেস’ পি টি ঊষা। করোনাকালেও তাঁর ‘ঊষা স্কুল অফ অ্যাথলেটিক্স’-এ কোচিং থেমে নেই। প্রথমদিকে কয়েকদিনেই পরিস্থিতি বুঝে নিয়েছেন ‘স্প্রিন্ট কুইন’। তারপর ধীরে ধীরে অনেকটাই স্বাভাবিক করে তুলেছেন নিজের অ্যাথলেটিক্স স্কুলকে। বুধবার দুপুরে ফোনে ঊষা বলছিলেন, ‘এমনিতে আমাদের কেরালার অবস্থা তো শুরু থেকেই অন্য রাজ্যের তুলনায় অনেক ভাল। তবু প্রথমদিকে ব্যাপারটা একটু বুঝে নিতে চেয়েছিলাম। কোনও ঝুঁকি নিতে চাইনি। তাই লকডাউনের জন্য ট্রেনিং কিছুদিন বন্ধও ছিল। তারপর সবরকম বিধি মেনেই ট্রেনিং শুরু করে দিই। এখনও সেই বিধি মেনেই অনুশীলন চলছে। কোনও ঝুঁকি নিচ্ছি না।’
ঊষা মনে করেন, কোভিডের জন্য সারা বিশ্বেই নানাভাবে নানা জগতের মানুষ ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছেন। খেলোয়াড়রাও ব্যতিক্রম নন। বললেন, ‘অনেক খেলোয়াড়েরই প্রায় একটা বছর নষ্ট হয়ে গেল। আরও কতদিন এরকম চলবে, জানি না। অলিম্পিক একবছর পিছিয়ে যাওয়ায় অনেকের সারাজীবনের স্বপ্নই হয়ত শেষ হয়ে যাবে। এবার অলিম্পিককে টার্গেট করে অনেকে এগিয়েছিল। একবছর পর আবার ওই ফর্মে নাও থাকতে পারে। হয়ত অলিম্পিক দলেই ঢুকতে পারবে না। সারাজীবনে তাদের আর অলিম্পিকে অংশ নেওয়া হবে না। সামনের বছরও যদি অলিম্পিক না হয়, তাহলে সমস্যা আরও বাড়বে। আরও অনেকের বছরের পর বছর পরিশ্রম বৃথা হয়ে যাবে। বয়স তো আর থেমে থাকবে না। অনেককে হয়ত খেলা ছেড়েও দিতে হবে।’
করোনার কঠিন সময়ে বিকল্প হিসেবে অনেকে ‘অনলাইন কোচিং’ বেছে নিয়েছেন। ঊষার এই ‘অনলাইন কোচিং’-এ বিশ্বাস নেই। বললেন, ‘অন্য খেলার কথা বলতে পারব না। অ্যাথলেটিক্সে অনলাইন কোচিং হয় না। আমি তাই শুরু থেকেই চেষ্টা করেছি মাঠে নেমে যাতে প্র্যাকটিস করানো যায়। নিয়ম মেনে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ট্রেনিং করিয়ে যাচ্ছি। তবে কোনওরকম ঝুঁকি নিচ্ছি না। আমার স্কুল ক্যাম্পাসে আমি ছাড়া বাইরের কেউ এখন ঢুকছেও না। একমাত্র আমিই বাড়ি থেকে যাচ্ছি, সবরকম সতর্কতা মেনেই। আমিও বাড়ি আর স্কুলের বাইরে অন্য কোথাও যাচ্ছি না। এটাও সতর্কতার জন্যই। আর ট্রেনিরা তো ক্যাম্পাসের ভেতর হস্টেলেই আছে। ওদেরও ক্যাম্পাসের বাইরে যাওয়া একেবারেই বন্ধ। ট্রেনিং শুরু করার পর প্রথমদিকে সবাইকে একসঙ্গে মাঠে না এনে আলাদা আলাদা গ্রুপে ভাগ করে দিয়েছিলাম। এখন আরেকটু শিথিল করা হয়েছে। ট্রেনিং শুরু না করে উপায় ছিল না। টানা ৬ মাস ঘরে বসে থাকলে অনেককে তো খেলাধুলোই ছেড়ে দিতে হত। মেয়েগুলোর ভবিষ্যৎ কোথায় গিয়ে দাঁড়াত?’
পি টি ঊষা সবচেয়ে বেশি চিন্তায় এখন জিসনা ম্যাথুকে নিয়ে। টিন্টু লুকার পর জিসনাকে নিয়েই বড় স্বপ্ন দেখছেন ঊষা। বললেন, ‘টোকিও অলিম্পিকের কথা মাথায় রেখেই ওকে তৈরি করছিলাম। খুব ভাল উন্নতি করছিল। কোভিডে তো টোকিও অলিম্পিক একবছর পিছিয়ে গেল। এতে ভীষণ ক্ষতি হয়ে গেল। এখন আবার আরও একবছর ওকে ঠিক মতো তৈরি রাখতে হবে। এজন্য ওকে খাটতে হবে। আমাকেও খাটতে হবে।’
শিক্ষার্থীরা মাসের পর মাস টানা হস্টেলে আটকে আছেন। এজন্য বিনোদনের ব্যবস্থাও করেছেন ঊষা। বললেন, ‘মাঝেমধ্যে ওদের নিয়ে ছবি আঁকার কম্পিটিশন করছি। নাচের, গানের কম্পিটিশন করছি। যেমন স্বাধীনতা দিবসের দিন নাচ, গানের একটা অনুষ্ঠানও হয়েছে। এতে কোভিডের আতঙ্ক থেকেও ওদের দূরে রাখা যাচ্ছে।’
ঊষার আরও একটা বড় চিন্তা, কবে শুরু হবে কম্পিটিশন। বললেন, ‘মাসের পর মাস শুধু প্র্যাকটিস করে গেলে হয় না। কম্পিটিশন দরকার। কম্পিটিশনের জন্য যে মানসিকতা দরকার, সেটা শুধু মাসের পর মাস প্র্যাকটিস করে হয় না। কবে কম্পিটিশন শুরু হবে, সেদিকেই তাকিয়ে আছি। নিজের স্কুলের ট্রেনিদের নিয়ে মাঝেমধ্যে ক্যাম্পাসের ভেতর মিনি কম্পিটিশন করছি। ওদের মোটিভেট করার চেষ্টা করছি। এছাড়া আর কোনও পথ নেই।’ পাশাপাশি ঊষা জানালেন, পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক না হলে কম্পিটিশন শুরু করাও ঠিক হবে না।
ঊষার ছেলে ঊজ্জ্বল বছর তিনেক আগে ডাক্তারি পাস করেছেন। তারপর আন্তর্জাতিক অলিম্পিক সংস্থার তত্ত্বাবধানে দু’বছরের স্পোর্টস মেডিসিনের ডিপ্লোমা কোর্সও করে ফেলেছেন। ঊষা বলছিলেন, ‘ঊজ্জ্বল এবার করতে চায় স্পোর্টস মেডিসিনের এম ডি কোর্স। এখন অবশ্য বাড়িতেই আছে। আমার স্কুলের মেয়েদের জন্য ঊজ্জ্বল অনেক পরামর্শ দিচ্ছে। এটা এখন আমার বাড়তি লাভ।’