বেশ কয়েকবছর ধরেই রাজু মনিকার অসুস্থ, শয্যাশায়ী। পুরো শরীর অসাড়। কারও সাহায্য ছাড়া উঠে দাঁড়াতে পারেন না। একসময় ভ্যান চালাতেন। অসুস্থ হয়ে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলার পর সংসারের হাল ধরতে হয় ওঁর স্ত্রী মিঠু মনিকারকে। পাড়ায় কয়েক বাড়িতে রান্নার কাজ শুরু করেন। এই ভাবেই দুই সন্তানকে নিয়ে সংসার সামলাচ্ছিলেন। এরপর বাড়ি বাড়ি গিয়ে রান্নার কাজ কমিয়ে ফেলেন। শুরু করেন মিড ডে মিলের রান্না। করোনা-আতঙ্কে সেই কাজ এখন বন্ধ। শুধু পাড়ায় একটি বাড়িতে রান্নার কাজ ধরে রেখেছেন। তাতেই না-চলার মতো চলছে সংসার।
রাজু-মিঠুর ছেলে অভিজিৎ আর্থিক অনটনে একসময় লেখাপড়া ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। পরে ওপেন স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। লেখাপড়ার বাইরে অভিজিতের ছোটবেলা থেকে প্রিয় বাস্কেটবল খেলা। বোলপুরের ইয়ং টাউন ক্লাবে বাস্কেটবল খেলতে শুরু করেছিল। একসময় ওখান থেকে কলকাতায় নিয়ে এসেছিলেন সুব্রত দাস (বাপ্পা)। নিউ আলিপুর রেড স্টারস অ্যাসোসিয়েশনের হয়ে খেলতে থাকে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায়। শুধু তাই নয়, বোলপুরের বিবেকানন্দ পল্লীর অভিজিৎ পরপর চার বছর দু’টি বয়সভিত্তিক বাংলা দলের হয়ে জাতীয় প্রতিযোগিতায় খেলেছে। ২০১৬ (কর্ণাটক) ও ২০১৭ সালে (হায়দরাবাদ) ইউথ ন্যাশনালে এবং ২০১৮ (পাঞ্জাব) ও ২০১৯-এ (বিহার) জুনিয়র ন্যাশনালে। ২০১৭ সালে ডাক পেয়েছিল যুব ভারতীয় দলের শিবিরে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইউথ এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ভারতীয় দলে অবশ্য সুযোগ হয়নি। অভিজিৎ বলল, ‘বাপ্পাদা সাহায্য না করলে এতদিন খেলা ছেড়ে দিতে হত। এখনও সব সমস্যায় আমার পাশে থাকেন।’
সংসারের টালমাটাল অবস্থায়ও অগ্রগতি ঠিকই ছিল। কিন্তু এখন তো ভেবেই পাচ্ছে না, আর খেলাধুলো করতে পারবে কিনা! অভিজিৎ বলছিল, ‘এখন বাড়িতে ভরপেট খাবারই জুটছে না। একসময় মিড ডে মিলের রান্নার কাজে মা-র সঙ্গে আমিও যাচ্ছিলাম। এখন বাড়িতে বসে। অন্য কোনও কাজও পাচ্ছি না। কী করব, ভেবে পাচ্ছি না!’