করোনাকালে খেলার জগতের অনেকেই নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। অনুশীলন বন্ধ, খেলাধুলো নেই, নানা প্রতিযোগিতা বাতিল! আরও কত কী! কেউ কেউ আবার হাতে থাকা অফুরন্ত সময়টাকে কাজে লাগাচ্ছেন অন্যভাবে। যেমন ভারোত্তোলক রাখি হালদার। করোনার জেরে যখন লকডাউন শুরু হয়, তখন থেকেই আটকে আছেন পাতিয়ালায়। ওখানেই চলছিল ভারোত্তোলনের জাতীয় শিবির। যেখানে ছিলেন পাঁচজন মহিলা ও দু’জন পুরুষ ভারোত্তোলক। লকডাউন শুরু হতেই প্র্যাকটিস বন্ধ হয়ে যায়। বাড়ি ফেরারও তখন উপায় নেই। শুরু হয় ওঁদের হস্টেলবন্দি জীবন। এখনও তাই। তবে পরিস্থিতি কিছুটা বদলেছে।
৬ মাস আগে যখন লকডাউন শুরু হয়, প্র্যাকটিস ছিল পুরোপুরি বন্ধ। টানা সাড়ে তিন মাস প্র্যাকটিস হলে যাওয়া নিষেধ ছিল। পাতিয়ালা থেকে ফোনে রাখি বললেন, ‘তখন হস্টেলের বারান্দায় নিজেদের উদ্যোগে সবাই আলাদা আলাদা সময়ে একা একা ফিজিক্যাল ট্রেনিং করতাম। আড়াই মাসের মতো হল আমরা হলে গিয়ে প্র্যাকটিস করতে পারছি। ওয়েটলিফটিং বডি কনটাক্ট খেলা নয়। তাই আমাদের সমস্যা কম। তবে কিছু কিছু নিয়ম তো আছেই। সেগুলো মেনেই চলতে হচ্ছে।’
রাখিদের অনুশীলন চলছে এখন সপ্তাহে পাঁচদিন, তিন বেলা করে। সকালে সাড়ে ছ’টা থেকে সাড়ে আটটা। তারপর দশটা থেকে দুপুর একটা। তৃতীয় পর্যায়ের অনুশীলন একটু বেশি সময় ধরে, বিকেল চারটেয় শুরু হয়ে রাত আটটা-সাড়ে আটটা পর্যন্ত। এখন সেভাবে সময় পাচ্ছেন না। কিন্তু যখন অনুশীলন পুরোপুরি বন্ধ ছিল কীভাবে সময় কাটাতেন? রাখি বললেন, ‘ওই সময়টা সত্যি বিরক্তিকর ছিল। যদিও আমি তখন অনেকটা সময়ই কাটিয়েছি হিন্দি গল্পের বই পড়ে। আর টুকটাক সিনেমা দেখে।’ হঠাৎ হিন্দি গল্পের বই কেন? এবার রাখির জবাব, ‘আমি বেশ ভালই হিন্দি বলতে পারি। কিন্তু হিন্দি লিখতে বা পড়তে অতটা পারি না। মনে হল হাতে যখন সময় আছে হিন্দি বই পড়তে শুরু করি। তাই করলাম। এখনও প্র্যাকটিসের মাঝে যেটুকু সময় পাচ্ছি, হিন্দি পড়ছি, লিখছি। নিজেই নিজের টিচার।’
করোনা-আতঙ্কের আগে গত ডিসেম্বরে নেপালে সাউথ এশিয়ান গেমসে সোনা জিতেছেন। তারপর কাতারে ইন্টারন্যাশনাল কাপে গলায় উঠেছে ব্রোঞ্জ পদক। লকডাউন শুরুর আগেই কলকাতায় জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। পরপর ছিল আরও কিছু প্রতিযোগিতা। সবই পণ্ড!
অনুশীলন করছেন, হিন্দি শিখছেন। এর মাঝেও রাখি চিন্তামুক্ত নন। বছরের পর বছর খুঁজেও কোনও স্পনসর পাননি। নদীয়া জেলার হবিবপুরের বিষ্ণুপুর গ্রামের এক মৎস্যজীবী পরিবারের মেয়ে রাখি খেলাধুলো ছেড়ে দেওয়ার কথাই ভাবছেন। বলছিলেন, ‘ইস্টার্ন রেলে চাকরি করলেও স্পনসর ছাড়া আর খেলা চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। গ্রামে বাবা-মা আছেন। বাবা এখন কাজ করতে পারেন না। টাকা পাঠাতে হয়। কলকাতায় আমার থাকার বাড়ি ভাড়াই দিতে হয় মাসে আট হাজার টাকা। ন্যাশনাল ক্যাম্পে থাকায় খাওয়া-দাওয়ার খরচ নেই ঠিকই। কিন্তু আমাদের ওয়েট লিফটিংয়ে একস্ট্রা ফুড দরকার। সেগুলোর জন্যও খরচ আছে। সত্যি, এভাবে খেলাধুলো চালানো যায় না। মাস দুয়েক আগে মন্ত্রী লক্ষ্মীরতন শুক্লাকে ফোন করেছিলাম। স্পনসরের কথা বললাম। বলেছেন, দেখবেন। দেখা যাক। মনে হচ্ছে খেলা ছেড়েই দিতে হবে!’