করোনাকালের গোড়ায় আড়াই মাস আটকে ছিলেন পাতিয়ালায়। আনলক পর্বের শুরুতেই জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে ফিরে এসেছেন নদীয়া জেলার বাদকুল্লার স্টেশন পাড়ার বাড়িতে। এখন বাদকুল্লার অনামী ক্লাবে একবেলা অনুশীলন আর বাড়িতে বসে টুকটাক সিনেমা দেখে, লেখাপড়া করে সময় কাটছে সুরভি বিশ্বাসের। মন ভাল নেই গত ডিসেম্বরে নেপালে সাউথ এশিয়ান গেমসে দেশের হয়ে রুপো জেতা ডিসকাস থ্রোয়ারের।
রবিবার দুপুরে ফোনে সুরভি বলছিলেন, ‘পাতিয়ালায় ক্যাম্পে ওই আড়াই মাস কীভাবে কেটেছে, বলে বোঝাতে পারব না। সামনে মাঠ। ওই মাঠই আমার জীবন, অথচ সেখানে যেতে পারছি না। মনে হত দৌড়ে চলে যাই। কিন্তু উপায় ছিল না। কড়া নির্দেশ ছিল, হস্টেলের বাইরে যাওয়া চলবে না। হস্টেলের লনে সামান্য গা ঘামানো ছাড়া কোনও প্র্যাকটিসের উপায় ছিল না। বাকিটা হস্টেলের ঘরে বন্দি। মাঝেমাঝে মনে হত, বাড়ি চলে আসি। সেটাও সম্ভব ছিল না। সত্যি ভীষণ কঠিন সময় গেছে!’
পাতিয়ালা থেকে বাড়ি ফেরার সময় বলা হয়েছিল, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সুরভিদের ডেভেলপমেন্ট ক্যাম্প আবার শুরু হবে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ক্যাম্পে যোগ দেওয়ার কোনও নির্দেশ আসেনি। সাউথ এশিয়ান গেমসের আগে গত বছর ওপেন ন্যাশনাল এবং আন্তঃ রাজ্য অ্যাথলেটিক্সেও ডিসকাস থ্রোয় পদক জিতেছেন সুরভি। ওপেন ন্যাশনালে ব্রোঞ্জ, আন্তঃ রাজ্য মিটে রুপো। সুরভির আক্ষেপ, ‘বেশ ভালই উন্নতি হচ্ছিল। সবারই কিছু টার্গেট থাকে। আমারও ছিল। করোনা সব শেষ করে দিল! আবার যেন সব নতুন করে শুরু করতে হবে। সেটাও কবে থেকে পারব, জানি না! কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, জানি না।’
বাদকুল্লার বাড়িতে ফিরলেও এখনও অনামী ক্লাবের মাঠে যাওয়ায় অনেক বিধিনিষেধ। দু’বেলা মাঠে যেতে পারছেন না। একসঙ্গে অনেকের যাওয়াও বারণ। ছোটবেলা থেকে সুরভির কোচ ওঁর বাবা প্রাক্তন ডিসকাস থ্রোয়ার সুশীল বিশ্বাস। এখনও বাদকুল্লায় থাকলে বাবার কাছেই প্র্যাকটিস করেন। বিধিনিষেধ মেনে একবেলা করে বাবার সঙ্গে মাঠে যাচ্ছেন। সুরভি বললেন, ‘এবারই অ্যাডামাস ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি। এমনিতে তো ওখানে ক্লাস করতে যাওয়ার বিশেষ সুযোগ হবে না। এখন অনলাইন ক্লাস হচ্ছে। বাড়িতে আছি বলে, অনলাইন ক্লাস করছি। অ্যাকশন মুভি দেখতে ভাল লাগে। কিছু অ্যাকশন মুভি, হ্যারি পটারের সিরিজ দেখছি। বাড়ির সবার সঙ্গে গল্প করছি। এভাবেই সময় কাটছে।’
সময় কেটে গেলেও সুরভির মন পড়ে আছে পাতিয়ালায়। সুরভি বলছিলেন, ‘লোকাল ক্লাবের প্র্যাকটিস আর ন্যাশনাল ক্যাম্পের প্র্যাকটিসের মধ্যে পার্থক্য অনেক। তাড়াতাড়ি আগের দিনগুলো ফিরে আসুক। আবার চলে যাই ক্যাম্পে। কবে যে ওই দিনগুলো ফিরে আসবে!’