অশোককুমার সাউ হাওড়ার শিবপুর অঞ্চলে রিকশা চালাতেন। ২০১৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর যখন রিকশা চালাচ্ছিলেন, তখনই এক পথ দুর্ঘটনায় মারা যান। তারপর ওঁর স্ত্রী সুলতা সাউ লোকের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করে সংসার চালাতে শুরু করেন। এখন বয়সের কারণে সুলতাও আর কাজ করতে পারছেন না। ফলে সংসারে অনটন। ওঁদের ছেলে মনজিৎ কুমার সাউ এখন বাংলার প্রতিষ্ঠিত বক্সার। সিনিয়র জাতীয় বক্সিং প্রতিযোগিতায় বাংলার সাফল্য এখন দূরবীণ দিয়ে দেখতে হয়। এরকম পরিস্থিতিতেই গত বছর হিমাচল প্রদেশে সিনিয়র জাতীয় প্রতিযোগিতা থেকে ৪ বছর পর বাংলাকে পদক এনে দিয়েছেন মনজিৎ। ৫২ কেজি বিভাগের ব্রোঞ্জ পদক। এর আগে বাংলায় শেষ পদক এসেছিল ২০১৫ সালে। জিতেছিলেন আর্শাদ আসিফ খান। আগে বয়সভিত্তিক বিভিন্ন বিভাগেও রাজ্য ও জাতীয় পর্যায়ে সাফল্য রয়েছে মনজিতের। তারপর বাংলাকে সিনিয়র জাতীয় আসর থেকে পদক এনে দিলেও তাতে পেট ভরছে না মনজিতের।
শিবপুরে বহুবছর ধরেই বক্সিংয়ের চল। সেই ধারা এখনও বজায় আছে তপনকুমার বসুর সৌজন্যে। শিবপুর পুলিশ লাইন্সের রিংয়ে দলে দলে ওই অঞ্চলের ছেলেরা এখনও বক্সিং শিখতে আসে। অধিকাংশই গরীব ঘরের ছেলে। এভাবেই একদিন ওখানে দেখা গিয়েছিল মনজিতকেও। কোচ তপনকুমার বসুর কোচিংয়ে ধীরে ধীরে সাফল্যও আসতে শুরু করে। ওই সাফল্য দেখে মা-বাবা একসময় কিছুটা নিশ্চিন্ত হচ্ছিলেন, মনজিৎ একদিন সংসারের হাল ফেরাবে। কিন্তু বাবা তো তিন বছর আগেই প্রয়াত। আর মা-ও সুখের দিন দেখার সুযোগ এখনও পাননি। কারণ এখনও একটা চাকরি জোটাতে পারেননি মনজিৎ। ফলে সংসারের হাল তো ফেরেইনি। বরং আরও খারাপ হয়েছে। মনজিৎ বলছিলেন, ‘চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, আরও ভাল পারফরমেন্স করতে। আমার তো রিংয়ে আরও ভাল লড়াই করা ছাড়া অন্য কিছু করার নেই।’
রিংয়ের সেই অনুশীলনও বড় ধাক্কা খেয়েছে করোনার জেরে। মাসের পর মাস ঘরে বসে। মনজিৎ বললেন, ‘বাড়িতে কিছুটা ফিজিক্যাল ট্রেনিং করা ছাড়া লকডাউনের সময় অন্য কিছু প্র্যাকটিস করার উপায় ছিল না। এখন আনলকের সময় নিয়ম মেনে রিংয়ে যাচ্ছি। তা-ও সরাসরি ফাইট প্র্যাকটিসের সুযোগ হচ্ছে না। এভাবে আর কতদিন চলবে, কে জানে! এতে নিজের ফর্ম ধরে রাখা সত্যি কঠিন।’
মনজিতের কথায় ঘুরেফিরে আসছিল চাকরির প্রসঙ্গ। বললেন, ‘বাড়ির অবস্থা খারাপ। বাবা নেই। মা-র আর কাজ করার ক্ষমতা নেই। আমি কোনও কাজ পাচ্ছি না। দুই দাদা একটা জুট মিলে জোগাড়ের কাজ করে। সামান্য টাকাই পায়। দাদাদের ওই সামান্য আয়েই আমাদের সংসার চলে। আমার খেলার খরচও দাদাদেরই চালাতে হয়। সত্যি, ভীষণ খারাপ অবস্থায় আছি! চাকরি না পেলে বক্সিংই ছেড়ে দিতে হবে।’