বেঙ্গালুরুর ডলফিন অ্যাকুয়াটিক্স থেকে তিনি এখন অনেক দূরে। কোলাঘাটের সাহাপুরে। সামনে ঝকঝকে সুইমিং পুলও এখন নেই, যা দেখে ঝাঁপিয়ে পড়বেন জলে। করোনা-লকডাউন-আনলক, সুপ্রিয় মণ্ডলের জীবনের চলার পথ এলোমেলো করে দিয়েছে। করোনা-লকডাউন শুরুর কয়েকদিন আগেই বেঙ্গালুরু থেকে ফিরে এসেছিলেন কোলাঘাটের গ্রামের বাড়িতে। এখনও সেখানেই। গত কয়েকবছর ধরেই ধারাবাহিক সাফল্য পেয়ে এসেছেন। গত ডিসেম্বরে নেপালে সাউথ এশিয়ান গেমসে নিজের প্রিয় ইভেন্ট ২০০ মিটার বাটারফ্লাইয়ে সোনা জিতেছেন। নানা সাফল্য পেলেও এখনও অলিম্পিকে সুইমিং পুলের জলে নামা হয়নি। নেপাল থেকে ফিরেই আবার চলে গিয়েছিলেন বেঙ্গালুরুতে। লক্ষ্য ছিল টোকিও অলিম্পিকের যোগ্যতা অর্জন করা। কিন্তু করোনা এসে সব স্বপ্ন আপাতত ধুয়েমুছে সাফ করে দিয়েছে।
কোলাঘাটে যখন ফিরে আসেন, ঠিক ছিল পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলেই আবার চলে যাবেন বেঙ্গালুরু। শুরু করবেন কোচ নিহার আমিনের কাছে অলিম্পিকে যোগ্যতা অর্জনের প্রস্তুতি। কিন্তু গ্রামের বাড়িতে বসেই একদিন শুনতে হয়, টোকিও অলিম্পিক এবছর হচ্ছে না। হবে সামনের বছর। সুপ্রিয় বলছিলেন, ‘যখন বাড়ি চলে আসি, এতটা বুঝতে পারিনি। ভেবেছিলাম কিছুদিন পরই আবার বেঙ্গালুরু চলে যাব। এখন তো সাড়ে ছয় মাস কেটে গেল। কবে আবার বেঙ্গালুরু যেতে পারব, জানি না!’ বাড়ি ফিরে দিন-দুয়েক কোলাঘাট সুইমিং পুলে গিয়েছিলেন। তারপর লকডাউন ঘোষণা হতেই সেখানে যাওয়াও বন্ধ হয়ে যায়। এখন আনলক পর্বেও সুরক্ষাবিধি মেনে সেই সুইমিং পুলের দরজা খোলেনি। ফলে জলে নামাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে সুপ্রিয়র। বললেন, ‘আমাদের বাড়ির কাছাকাছি সেরকম ভাল পুকুরও নেই, যেখানে নিয়ম মেনে সাঁতার কাটা যায়। তাই পুরোপুরি এখন জল থেকে দূরে। বাড়ির সামনে কিছুটা ফিজিক্যাল ট্রেনিং করছি।’
দেশের অন্যতম সেরা সাঁতারুর এতে হতাশা আসারই কথা। সুপ্রিয়ও মাঝেমধ্যে হতাশ হয়ে পড়ছেন। তবে লকডাউন শেষে আনলক পর্বে এসে নিজেকে ফ্রেস রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বললেন, ‘ছোটবেলা থেকেই ছবি তুলতে আমার ভাল লাগে। যেখানেই যাই, আমার সঙ্গী থাকে ক্যামেরা। তবে সাঁতারের জন্য তখন তো বেশি ছবি তোলার বা ছবি নিয়ে ভাবনাচিন্তার সুযোগ থাকে না। এখন অনেক সময়। ক্যামেরাই আমার সবসময়ের সঙ্গী। নানারকম ছবি তুলছি। আর গার্ডেনরিচে (সাউথ ইস্টার্ন রেল) অফিসেও যাচ্ছি।’
এসবের মাঝেও সুপ্রিয়র মন কিন্তু জলে। বললেন, ‘এটা ঠিকই, করোনার জন্য অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। একদিন পরিস্থিতি নিশ্চয়ই স্বাভাবিক হবে। আবার নতুনভাবে শুরু করতে হবে। আমার স্বপ্নটা কিন্তু মরেনি। শুনছি সামনের বছর টোকিওয় অলিম্পিক হবে। আমার ওই টার্গেটটা এখনও একইরকম আছে। অলিম্পিকের যোগ্যতা অর্জনের জন্য লড়াইটা চালিয়ে যেতে হবে।’ বুধবারই শুনেছেন, এবার সুইমিং পুল খুলে দেওয়া হবে। এতে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন সুপ্রিয়।