করোনাকালে প্রথম তিন মাস ঘরেই আটকে ছিলেন। তারপর বিধি মেনে মাঝেমধ্যে প্র্যাকটিসে যেতে শুরু করেন পাড়ার ক্লাব, যেখান থেকে উত্থান সেই নৈহাটি ইউথ অ্যাসোসিয়েশনে। কোচ মিহির ঘোষও আসতেন। কিছুটা অনুশীলন সেরে নিচ্ছিলেন। এভাবেও বেশিদিন চলেনি। নৈহাটিতে, বিশেষ করে ক্লাবের কাছাকাছি অঞ্চলে করোনা দেখা দেওয়ায় আতঙ্ক বেড়ে যায়। ফলে আবার বন্ধ হয়ে যায় ক্লাবের দরজা। এখন আবার মাঝেমধ্যে যাচ্ছেন, তবে রোজ নয়। সেটাও আবার যেদিন যান, একবেলা, সুরক্ষাবিধি মেনে। আর কলকাতায় যেখানে প্র্যাকটিস করেন কোচ সৌভিক রায়ের কাছে, সেই ভবানীপুর ব্যায়াম সঙ্ঘে তো লকডাউনের শুরু থেকেই আর আসাই হয়নি। এভাবেই সাড়ে ৬ মাস কেটে গেল কমনওয়েলথ টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়ন ঐহিকা মুখার্জির। বিরক্তিকর পরিস্থিতিতেও বাড়িতে আটকে থাকা ঐহিকা নানা ভাবে চেষ্টা চালাচ্ছেন নিজেকে ফিট রাখার, মানসিক দিক দিয়ে ভাল থাকার। কীভাবে কাটাচ্ছেন সময়? ফিজিক্যাল ট্রেনিং, মোবাইলে খেলা ও টুকটাক সিনেমা দেখা, গল্পের বই পড়া। মেতে থাকছেন প্রিয় হ্যারি পটার নিয়ে।
করোনা-আতঙ্ক শুরু হওয়ার আগের একবছর মিহির ঘোষ ও সৌভিক রায়ের ছাত্রী ঐহিকার কেটেছে খুবই ভাল। সাফল্য আর সাফল্য। এগোচ্ছিলেন দ্রুত গতিতে। কটকে কমনওয়েলথ টেবিল টেনিসে জোড়া সোনা। সিঙ্গলস ও দলগত। নেপালে সাউথ এশিয়ান গেমসে জিতেছেন চারটি পদক। মহিলাদের দলগত সোনার সঙ্গে তিনটি রুপো, সিঙ্গলস, ডাবলস ও মিক্সড ডাবলসে। হায়দরাবাদে জাতীয় প্রতিযোগিতায় সিঙ্গলসে তৃতীয়। লকডাউন শুরুর আগেই খেলে এসেছেন পর্তুগালে অলিম্পিকের দলগত যোগ্যতা অর্জনের প্রতিযোগিতায়। এছাড়াও সাফল্য পেয়েছেন ভারতে নানা প্রতিযোগিতায়। কিন্তু করোনা-আতঙ্ক তৈরি করেছে বড় প্রতিবন্ধকতা। খেলতে যাওয়ার কথা ছিল দলগত বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে। সেটা আর হয়নি। এছাড়াও দেশে-বিদেশে গত ৬ মাসে আরও কিছু প্রতিযোগিতায় ঐহিকাকে খেলতে দেখা যেত। যার জন্য খুব ভালভাবে প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু সেই প্রস্তুতি কোনও দাম পেল না।
সাধারণতঃ নৈহাটির বাড়িতে থাকলে মিহির ঘোষের কাছে নৈহাটি ইউথ অ্যাসোসিয়েশনেই প্র্যাকটিস করেন। আর কলকাতায় অনুশীলন করেন সৌভিক রায়ের কাছে ভবানীপুর ব্যায়াম সঙ্ঘে। এজন্য কলকাতায় ডোভার লেনে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কোয়ার্টার্সে থাকেন। এখন এসবই বন্ধ। নৈহাটির বাড়িতে আটকে থাকতে আর ভাল লাগছে না। ঐহিকা এখন দিন গুনছেন কবে মুক্তি পাবেন এই অসহ্য পরিস্থিতি থেকে, আবার টেবিল টেনিস বোর্ডে ঝড় তুলবেন।