সপ্তাহে তিন দিন সকাল আটটায় জয়নগরের উত্তর দুর্গাপুর শ্যামসুন্দরতলার বাড়ি থেকে বের হয়ে শিয়ালদহে ইস্টার্ন রেলের অফিসে কাজ করে রাত আটটায় বাড়ি ফেরা। সপ্তাহের বাকি দিনগুলোয় অনলাইনে কোচ বিশ্বেশ্বর নন্দীর নির্দেশ মেনে ফিজিক্যাল ট্রেনিং। গত তিন মাস এরকমই চলছে। করোনাকালের প্রথম সাড়ে তিন মাস অফিসে আসার দরকার ছিল না। তখন আরও বেশিদিন ওই ফিজিক্যাল ট্রেনিং চলত ভারতের অন্যতম সেরা জিমন্যাস্ট প্রণতি দাসের।
আরো পড়ুন : রাজ্য অ্যাথলেটিক্সে ইস্টবেঙ্গলের পদকজয়ী সাগর মাছ বিক্রি করছে
এমনিতে বাড়িতে বিশেষ থাকা হয় না। জিমন্যাস্টিক্সের জন্য জাতীয় ক্যাম্প, এখানে-ওখানে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে যাওয়া, বাড়ির বাইরেই থাকতে হয় বেশি সময়। করোনা-লকডাউন-আনলক যেন শৈশবের অনেক স্মৃতি ফিরিয়ে দিয়েছে প্রণতিকে। জয়নগরের সৃজনী ক্লাবে কোচ গৌতম মুখার্জির হাত ধরেই জিমন্যাস্টিক্সে এসেছিলেন। আনলক শুরুর পর দু’দিন ওই ক্লাবেও গিয়েছিলেন প্র্যাকটিসের জন্য। প্রণতি বললেন, ‘মাত্র দু-দিন ওখানে গিয়েছিলাম। ওই ক্লাবে আমার অনেক স্মৃতি। কিন্তু সমস্যা হল, গ্রামের ক্লাবগুলোতে তো উন্নতমানের অ্যাপারেটার্স নেই। ভাল ম্যাট নেই। থাকা সম্ভবও নয়। বাড়িতে আটকে থেকে অ্যাপারেটার্স প্র্যাকটিস করতে পারছি না। ক্লাবে যাওয়ার পর অ্যাপারেটার্স দেখে মনে হল, একটু প্র্যাকটিস করি। কিন্তু সমস্যা হল, ওই অ্যাপারেটার্সে প্র্যাকটিস করতে গিয়ে যদি চোট লেগে যায়! তাই আর যাচ্ছি না। অ্যাপারেটার্স দেখে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারব না। আবার চোটের আশঙ্কাও রয়েছে।’ তাই বাড়িতেই বিশ্বেশ্বর নন্দীর অনলাইন পরামর্শে ফিজিক্যাল ট্রেনিং করছেন। বললেন, ‘জিমন্যাস্টদের ফিট থাকা খুবই জরুরি। ফিজিক্যাল ট্রেনিং না করে টানা ছয়-সাত মাস বাড়িতে বসে থাকলে শূন্যে পৌঁছে যেতাম। অ্যাপারেটার্স প্র্যাকটিস করতে না পারলেও অনলাইন ফিজিক্যাল ট্রেনিংয়ে নিজেকে অন্ততঃ ফিফটি পারসেন্ট ফিট রাখা যাচ্ছে।’ গ্রাম থেকে সাইয়ে যাওয়ার পর এবং জাতীয় ক্যাম্পে দীর্ঘদিন প্রণতি ছিলেন কোচ জয়প্রকাশ চক্রবর্তীর তত্ত্বাবধানে। মাঝেমধ্যে তাঁর পরামর্শও নিচ্ছেন।
রান্না করতে খুব ভালবাসেন প্রণতি। ন্যাশনাল ক্যাম্পেও অনেক সময় নিজে নানারকম রান্না করে কোচ, সতীর্থদের খাওয়াতেন। এখন অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে বাড়িতে আটকে পড়ে মন দিয়েছেন সেই রান্নাতেও। প্রণতি বলছিলেন, ‘নানা রকম রান্না করতে আমার খুব ভাল লাগে। আগেও যখন বাড়িতে আসতাম রান্না আমিই করতাম। এখন অনেক সময় পাচ্ছি। যেদিন অফিসে যাই, সেদিন অবশ্য সময় বের করা যায় না। অন্য দিনগুলোতে বাড়ির নানারকম কাজ করি। রান্না ঘরে অনেকটা সময় কেটে যায়। নিজের মনের মতো রান্না করি।’