পাতিয়ালায় জাতীয় শিবিরে খোশমেজাজেই আছেন বাংলার তরুণ ভারোত্তোলক অচিন্ত্য শিউলি। করোনার প্রভাবে অনেকেই দিশেহারা। হতাশায় ভুগছেন। অচিন্ত্যর তেমন কোনও সমস্যা নেই। রবিবার বিকেলে পাতিয়ালা থেকে ফোনে হাওড়া জেলার পাঁচলার দেউলপুরের ছেলে অচিন্ত্য বললেন, ‘সমস্যা মনে করলেই সমস্যা। শুধু খেলোয়াড় কেন, সারা বিশ্বে নানা জগতের মানুষেরই কোনও না কোনওভাবে ক্ষতি হয়েছে। লকডাউনের প্রথম দিকে কীভাবে সময় কাটাব, তা নিয়ে একটু চিন্তা ছিল। কয়েকদিনেই তা কেটে যায়। মানিয়ে নিই।’
করোনাকালের প্রথম তিন মাস প্র্যাকটিস বন্ধ ছিল। কী করতেন তখন? অচিন্ত্য জানালেন, ‘জিমে যাওয়ার উপায় ছিল না। মাঠেও যেতে পারতাম না। হস্টেলের বাইরে যাওয়া পুরোপুরি বন্ধ ছিল। হস্টেলের লনেই হাঁটতাম। হেঁটে নিজেকে যতটা ফিট রাখা যায়, সেই চেষ্টা করতাম। বাকি সময় ঘরে বসে খেলার ভিডিও, কিছু সিনেমা দেখা। ফোনে বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করা। এভাবেই কেটে গেছে। আর এখন তো কিছু নিয়ম মানতে হলেও দু-বেলা প্র্যাকটিস হচ্ছে। অবসর সময় কমে গেছে।’
গত বছর, ২০১৯ সালে বিশাখাপত্তনমে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে, সামোয়ায় কমনওয়েলথ ভারোত্তোলনে এবং নেপালে সাউথ এশিয়ান গেমসে ৭৩ কেজি বিভাগে সোনা জিতেছেন। বছরটা বেশ ভালই কেটেছে। কিন্তু ২০২০-র শুরুটা ভাল হয়নি। ফেব্রুয়ারিতে কলকাতায় জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জিততে ব্যর্থ হন। জেতেন রুপো। তারপরই জোর প্র্যাকটিস শুরু করেছিলেন কোচ বিজয় শর্মার তত্ত্বাবধানে। লড়াইটা ছিল আবার সেরার আসনে বসার। কিন্তু তারপরই শুরু হয়ে গেল করোনা-আতঙ্ক, লকডাউন। অচিন্ত্য বললেন, ‘হঠাৎ প্র্যাকটিস বন্ধ হয়ে গেলে কিছুটা ছন্দপতন তো হয়ই। কিন্তু এতে কারও কিছু করার ছিল না। আসলে আমি শুরু থেকেই এটা নিয়ে বেশি ভাবিনি। তাতে নিজের ওপর মানসিক চাপ বাড়ত। হস্টেলের বন্দিজীবনে আমার একমাত্র কাজ ছিল নিজেকে চাপমুক্ত রাখা। সেটা যেভাবেই হোক পেরেছি।’
আর সামনের প্রতিযোগিতা? যদি সামনের বছর অলিম্পিক হয়? এখানেও অচিন্ত্যর স্পস্ট জবাব, ‘কবে কী কম্পিটিশন হবে, সেটাই কেউ জানে না। এখন থেকে ভেবে লাভ নেই। আর টোকিও অলিম্পিক? সেটাও সামনের বছরও যে হবে, এরকম নিশ্চয়তা নেই। আর যদি হয়ও, কোয়ালিফাই করার জন্য আর কোনও কম্পিটিশন পাব কিনা, সেটাও জানি না। এখন থেকে ভেবে কী হবে? তাতে সেই মানসিক চাপ বাড়বে।’
আসলে শৈশব থেকেই লড়াই ওঁর রক্তে। অচিন্ত্যর বাবা জগৎ শিউলি ভ্যান চালাতেন। সাত বছর আগে হঠাৎই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। সেই থেকে মা পূর্ণিমা শিউলি জরির কাজ করে সংসার চালাতে শুরু করেন। সংসারের ওই লড়াই দেখতে দেখতেই বেড়ে উঠেছেন অচিন্ত্য। হয়ত সেই জন্যই বলছিলেন, ‘আমি অতকিছু ভাবি না। লড়তে জানি। প্র্যাকটিস শুরুর পর আমার যেটা কাজ, মন দিয়ে সেটা করছি। তিন মাস প্র্যাকটিসে না থাকায় যতটা পিছিয়ে পড়েছি, সেটা পুরণ করার চেষ্টা করছি।’