ইস্টবেঙ্গল বা মোহনবাগানের ম্যাচ দেখতে কলকাতা ময়দান বা সল্টলেক স্টেডিয়ামে এখন আর আসেন না। সেটা বয়সের কারণেই। তবে এখনও ওই দুই দলেরই প্রাক্তন ফুটবলার সুশীল সিনহা টিভিতে নিয়মিত খেলা দেখেন। ৮২ বছর বয়সী এই প্রাক্তন ফুটবলারের উপলব্ধি, ‘দর্শকদের আবেগ, উন্মাদনা আগের মতোই আছে। একটুও কমেনি। কিন্তু যে ব্যাপারটা আমাকে ভীষণ কষ্ট দেয়, সেটা হল বাঙালি ফুটবলারের সংখ্যা দিনের পর দিন কমে যাওয়া। ফুটবল তো বাঙালির খেলা। সেখানে বাঙালি এখন হারিয়ে যাচ্ছে। ফুটবলে বাঙালির অস্তিত্বের সঙ্কট। ইস্টবেঙ্গল, মোহনাবাগানে এখন প্রথম দলে কটা বাঙালি ছেলে থাকে? অন্য রাজ্যের, অন্য দেশের ফুটবলারে ভর্তি। এসব দেখতে আর ভাল লাগে না!’
১৯৬২-৬৪ ইস্টবেঙ্গলে, ১৯৬৫-৭০ মোহনবাগানে দাপটের সঙ্গে খেলেছেন ডিফেন্ডার সুশীল সিনহা। রাইট ব্যাক, লেফট ব্যাক, স্টপার, তিন পজিশনেই ছিলেন সাবলীল। ওঁদের সময়েও তো অন্য রাজ্যের ফুটবলার ছিলেন বড় দলে। এই প্রসঙ্গ তুলতেই বললেন, ‘হ্যাঁ, ছিল। কিন্তু কজন? আর এখন সংখ্যাটা বেড়েই চলেছে। বাঙালি ফুটবলার খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।’
ব্যারাকপুরের বাড়িতেই এখন করোনাকালে বন্দিজীবন। বললেন, ‘করোনার আগেও বাড়ি থেকে কম বের হতাম। সেটা বয়সের কারণেই। কোনও অনুষ্ঠানে গেস্ট হিসেবে যাওয়া ছাড়া দূরেও যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলাম। যেটুকু ঘোরাঘুরি, তা ছিল পাড়ার মধ্যেই। আর এখন করোনার ভয়ে তো বাড়ি থেকে বের হওয়া সম্ভবই নয়।’ ব্যারাকপুরে আটকে থাকলেও খেলাধুলোর সব খোঁজ রাখেন। ওঁকে কষ্ট দেয় ফুটবলের মতো অন্য খেলায়ও বাঙালি পিছিয়ে পড়ায়।


তিনি বলছিলেন, ‘ছেলেমেয়েরা এখন আর খেলাধুলো করতে চায় না। আগের মতো পাড়ায় পাড়ায় খেলাধুলোর পরিবেশও এখন নেই। মাঠের সংখ্যা কমে গেছে। কোথায় খেলবে, ছেলেমেয়েরা? ফুটবলের কথাই ধরুন, আগে জেলা থেকে কত ছেলে উঠে আসত। আর এখন জেলার খেলা তো প্রায় উঠেই গেছে। সারা বাংলায় আন্ডার হাইট কত টুর্নামেন্ট হত। সব বন্ধ হয়ে গেছে। কলকাতায় পার্কে পার্কে শুধু ফুটবল কেন, নানারকম খেলা হত। এখন তো পার্কই নেই। স্কুলে খেলার চল ছিল। এখন কটা স্কুলে সেভাবে গুরুত্ব দিয়ে খেলাধুলো হয়?’
ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান ছাড়াও খেলেছেন বাংলার হয়ে সন্তোষ ট্রফিতে। ভারতীয় দলের হয়ে খেলেছেন মারদেকা, এশিয়ান কাপ, প্রি-অলিম্পিকে। একসময় কলকাতায় ভ্রাতৃ সঙ্ঘের কোচ ছিলেন। জুনিয়র বাংলা দলের কোচ হয়েছিলেন একবার। জেলায় ছোটদেরও ফুটবল খেলা শেখাতেন। এখন ওঁর ফুটবল মানে টিভিতে খেলা দেখা।


তাঁর নিজের ব্যারাকপুর নিয়ে সুশীল সিনহা বললেন, ‘এখানেও আগের মতো আর খেলাধুলো হয় না। এখানে একটা স্টেডিয়াম তৈরি হয়েছিল। অনেক পরিকল্পনা ছিল। ওই স্টেডিয়াম গড়ার পেছনে অনেকের উদ্যোগ ছিল। তড়িৎ তোপদার ছিলেন। আমিও উদ্যোগীদের তালিকায় ছিলাম। ওই স্টেডিয়ামে ফুটবল লিগের কিছু ম্যাচ হয়। এছাড়া এখন আর কিছু হয় না। চেষ্টা অবশ্য চলছে ওখানে সারা বছর ছোটদের জন্য খেলাধুলোর ব্যবস্থা করার।’