১৫ পেরিয়ে ১৬-য় পা রাখা এক বাঙালি কিশোরী প্রিয়াঙ্কা চক্রবর্তী এখন কানাডার বয়সভিত্তিক ফুটবলে অতি পরিচিত নাম। সেন্টার ব্যাক প্রিয়াঙ্কা খেলে Province of Ontario-র Woodbridge Soccer Club-এর হয়ে। ওখানে প্রতিভা খোঁজা ও তুলে আনার জন্য O P D L (Ontario Player Development League) হয়। প্রিয়াঙ্কা ওই লিগে নিয়মিত খেলে আসছে ২০১৭ সাল থেকে।
অনূর্ধ্ব ১৩ দিয়ে শুরু। তারপর খেলেছে অনূর্ধ্ব ১৪, অনূর্ধ্ব ১৫ দলের হয়ে। এবছর ছিল অনূর্ধ্ব ১৬ দলে। কিন্তু কোভিডের জন্য লিগের খেলাই তো হয়নি। সামনের মরসুমের জন্য রয়েছে অনূর্ধ্ব ১৭ দলে। শুধু দেশের মধ্যে নয়, বিদেশেও Woodbridge Soccer Club-এর হয়ে বিভিন্ন টুর্নামেন্টে খেলেছে।


দেশের সেরা ক্লাব দল হওয়ায় Woodbridge Soccer Club বিদেশে নানা প্রতিযোগিতায় খেলার সুযোগ পায়। সেই সূত্রেই প্রিয়াঙ্কার অন্য দেশে খেলতে যাওয়া। যেমন ২০১৯ সালে আমেরিকার টেক্সাসে Dallas International Cup-এ খেলতে গিয়েছিল।
প্রিয়াঙ্কার বাবা প্রদীপ্ত চক্রবর্তী একসময় বালিগঞ্জের একডালিয়া প্লেসে থাকতেন। বালিগঞ্জ ইনস্টিটিউটে টেবিল টেনিস খেলতেন। জুনিয়র, সাব জুনিয়রে রাজ্য চ্যাম্পিয়নশিপেও অংশ নিয়েছেন। কিন্তু ১৯৯৫ সালের এপ্রিল মাসে পবিত্রকুমার চক্রবর্তীকে চলে যেতে হয় কানাডার টরন্টোয়। পুরো পরিবারই সেই থেকে ওখানকার বাসিন্দা। কানাডায় গিয়ে নিজেকে আর খেলাধুলোর সঙ্গে জড়ানোর সুযোগ হয়নি। সেই প্রদীপ্তর মেয়ে প্রিয়াঙ্কা। নিজের হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন মেয়ের মাধ্যমে সফল করার চেষ্টায় এখন ব্যস্ত প্রদীপ্ত।
প্রিয়াঙ্কার জন্ম টরন্টোয়। বাবা বাঙালি, মা কর্ণাটকের ম্যাঙ্গালোরের ললিতা ডি’সুজা। যদিও ললিতার ছোট বেলা কেটেছে দুবাইয়ে। এখন অবশ্য ওঁদের পরিবারও টরন্টোর বাসিন্দা। প্রিয়াঙ্কা অল্প বয়সে কয়েকবার কলকাতায় এসেছে। কলকাতায় শেষ আসা অবশ্য ৯ বছর আগে, ২০১১ সালে। প্রদীপ্তর ছোট ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে। টরন্টোর বাড়িতে ঠাকুর্দা, ঠাকুমা ও বাবা নিজেদের মধ্যে বাংলায় কথা বলেন। তা ভালভাবেই বুঝতে পারে প্রিয়াঙ্কা। কিন্তু বাংলা বলতে বা লিখতে-পড়তে পারে না।
প্রিয়াঙ্কা এখন Bill Crothers Public School-এ ক্লাস ইলেভেনে পড়ে। ওটা আসলে ওখানকার নামী স্পোর্টস স্কুল। Ontario প্রভিন্স বা রাজ্যের খেলাধুলোয় ভাল ছেলেমেয়েরা প্রায় সবাই ওই স্কুলেই পড়ে। শুধু ফুটবল নয়, অন্যান্য খেলারও। ওই স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই রাজ্য দল তো বটেই, কানাডার জাতীয় দলের হয়েও খেলে।
প্রিয়াঙ্কার ফুটবল খেলা শুরু ৬ বছর বয়সে। প্রদীপ্ত বলছিলেন, ‘শুরুতে ছিল শখের খেলা। পরে ওর আগ্রহ দেখে উৎসাহ দিতে থাকি, যাতে নিজেকে কম্পিটিটিভ ফুটবলের জন্য তৈরি করতে পারে।’ দিদিকে দেখে ফুটবল মাঠে পা ফেলেছে প্রদীপ্ত-ললিতার ১২ বছর বয়সী ছেলে প্রবীণও। Corpus Christi Elementary School-এর ক্লাস সেভেনের ছাত্র প্রবীণ।


ক্লাবে Omar Williams প্রিয়াঙ্কাদের হেড কোচ। ফুটবল খেলতে খেলতে এই অল্প বয়সেই প্রিয়াঙ্কার মাথায় ঢুকে গিয়েছে কোচিং। বড় হয়ে হতে চায় High Performance কোচ। এখনই তার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। নিজের খেলার ফাঁকেই ক্লাবের অনূর্ধ্ব ৬-৮, ছেলেমেয়েদের নিয়ে মাঠে নেমে পড়ে খেলা শেখাতে।


ফুটবলের পাশাপাশি লেখাপড়াকেও রীতিমতো গুরুত্ব দেয় প্রিয়াঙ্কা। ফোনে জানাল, স্কুলের পর্ব চুকে গেলে Law বা Political Science নিয়ে পড়ার ইচ্ছা। এখন থেকেই আমেরিকার কয়েকটি ইউনিভার্সিটির সঙ্গে কথাবার্তা চলছে স্পোর্টস স্কলারশিপের ব্যাপারে। প্রিয়াঙ্কার পছন্দের তালিকায় Georgetown University, University of Pennsylvania, Boston University রয়েছে।