কাশীনাথ দাস একসময় ফুটবল খেলতেন। সাহু মেওয়ালালের হাত ধরে কলকাতা ময়দানে খেলা শুরু করেছিলেন হেস্টিংসের হয়ে পঞ্চম ডিভিশনে। পরে গ্রিয়ার, যুগশান্তির হয়ে বিভিন্ন ডিভিশনে কয়েক বছর খেললেও ফুটবলার হিসেবে বেশি দূর এগোতে পারেননি। তিনি চাইতেন নিজে যা পারেননি, ছেলে যেন সেটা পারে। বাবার সেই স্বপ্নপূরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে প্রদীপ দাস। সংসারে নানা প্রতিকূলতা, তবু লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে গত বছর বাংলার হয়ে সাব জুনিয়র জাতীয় প্রতিযোগিতা মীর ইকবাল ট্রফিতে খেলা গোলকিপার।


কাশীনাথ ফুটবলে বেশি এগোতে পারেননি, চাকরিও জোগাড় করতে পারেননি। সংসার চালাতে একসময় পেশা হিসেবে বেছে নিতে হয়েছিল ভ্যান চালানো। এখনও ওটাই পেশা। তবে সারাদিন ভ্যান চালাতে পারেন না। কারণ শৈশব-কৈশোরের ফুটবলপ্রেম। ফুটবলের প্রতি সেই ভালবাসার টানেই বেলুড়ের বাড়ি থেকে লিলুয়ার সূর্যনগর মৈত্রী সঙ্ঘে ছোটদের খেলা শেখাতে যান। তখন আর ভ্যান চালানো হয় না।
বেলুড় খামারপাড়ায় প্রদীপদের পরিবারে দারিদ্র্য নিত্যসঙ্গী। সেই দারিদ্র্য করোনা-লকডাউন পর্বে বেড়েই চলেছে। সাড়ে ৪ মাস পরিবারে কোনও আয় নেই। কীভাবে সংসার চলছে? প্রদীপ বলল, ‘বাবার কাজ বন্ধ। এখন শুধু ফ্রি রেশনই ভরসা লকডাউনের প্রথমদিকে বিভিন্ন ক্লাব, সংস্থা ত্রাণ দিচ্ছিল আর ঘরে যা টাকা ছিল মোটামুটি চলে যাচ্ছিল। এখন আর চলছে না। যত দিন যাচ্ছে সমস্যা বাড়ছে। এরকম আরও কিছুদিন চললে মনে হয়, না খেয়ে থাকতে হবে।’
পরিবারের এই অবস্থায়ও ছেলেকে ফুটবল খেলায় উৎসাহ দেওয়া কমেনি বাবার। প্রবল দারিদ্র্যের মধ্যেও মনে জোর রাখছে ছেলেও। প্রদীপ বলছিল, ‘সুব্রত পাল, শঙ্কর রায় আমার প্রিয় দুই গোলকিপার। শঙ্করদার বাড়ির অবস্থাও ভীষণ খারাপ ছিল। আমাদের চেয়েও খারাপ। লড়াই করে বড় হয়েছে। শঙ্করদার লড়াইয়ের কথা শুনেছি। যা আমার মনের জোর বাড়ায়। শঙ্করদা যখন পেরেছে, আমিও পারব।’ বারবার ওর মুখে শোনা যাচ্ছিল, ‘হার মানছি না। আমি শেষ পর্যন্ত লড়ব।’
ফুটবলে এরই মধ্যে প্রদীপ অনেকটা সম্ভাবনা তৈরি করেছে। পরপর দু’বার সাব জুনিয়র জাতীয় ফুটবলে বাংলার হয়ে খেলেছে। গত বছর বাংলা সেমিফাইনাল থেকে ছিটকে গেলেও ওর খেলা নজর কেড়েছিল। বাংলার ওই দলের কোচ অর্চিষ্মান বিশ্বাস এখনও প্রদীপের খেলার প্রশংসা করেন। ইস্টবেঙ্গল, রেনবো হয়ে প্রদীপ দাস এখন মোহনবাগানের অনূর্ধ্ব ১৫ দলের ফুটবলার। প্রদীপ বলছিল, ‘সবে তো শুরু। আমাকে অনেক দূর যেতে হবে। সবারই তো লক্ষ্য থাকে ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানের সিনিয়র দলের হয়ে খেলা। সেটা তো আছেই। খেলতে চাই ভারতের হয়েও।’