পশ্চিম বর্ধমানের সালানপুর ব্লকের মালবহাল গ্রাম। এই গ্রামের সঞ্জীব বাউরী একসময় ফুটবল খেলতেন। যা সীমাবদ্ধ ছিল নিজেদের ও কাছাকাছি গ্রামের মধ্যেই। সুযোগের অভাবে বেশিদূর এগোতে পারেননি। কিন্তু তাতে তাঁর ফুটবলপ্রেমে ভাঁটা পড়েনি। গ্রামের বাড়ির পাশেই মাঠ। সেখানে এম আর বি সি গার্লস ফুটবল কোচিং ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ দেন। শিক্ষার্থীদের মধ্যে তাঁর মেয়ে রূপালী বাউরীও আছে।
ওই প্রশিক্ষণ শিবিরের আরও কয়েকজনের মতো রূপালীও ফুটবলে বেশ কিছুটা এগিয়েছে, সাফল্য পেয়েছে। ২০১৭ সালে মনিপুরে অনূর্ধ্ব ১৪ সাব জুনিয়র ন্যাশনালে বাংলার হয়ে প্রথম খেলার সুযোগ পায়। পরের বছর ত্রিপুরায় অনূর্ধ্ব ১৪ স্কুল ন্যশনালে খেলে। ২০১৯ সালে খেলেছে দুটো (অনূর্ধ্ব ১৪ ও অনূর্ধ্ব ১৭) স্কুল ন্যাশনাল, কোলাপুরে অনূর্ধ্ব ১৭ জুনিয়র ন্যাশনাল, চিত্তরঞ্জন এম এস গার্লস হাই স্কুলের হয়ে অনূর্ধ্ব ১৭ সুব্রত কাপে। কলকাতা মহিলা ফুটবল লিগে শ্রীভূমি এফ সি-র খেলোয়াড়। এবছর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে বেঙ্গালুরুতে ইন্ডিয়ান উইমেন্স লিগেও স্টপার রূপালী খেলেছে শ্রীভূমি এফ সি-র হয়ে।
রূপালীদের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। ওর বাবা সঞ্জীব রূপনারায়ণপুর বাজারের সামনের রাস্তায় বসে রেডিমেড পোশাক বিক্রি করেন । ফুটবল ক্যাম্প নিয়ে বেশি মেতে থাকায় পুরো সময়ও দিতে পারেন না। তবু এতদিন অল্প আয়েই কোনওরকমে চলে যেত সংসার। এখন করোনাকালে জোর ধাক্কা লেগেছে সেই সংসারে। সঞ্জীব বললেন, ‘পাঁচ মাস ঘরে বসে। করোনা, লকডাউনের ধাক্কা লেগেছে সব সংসারেই। যত দিন যাচ্ছে, অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে। ধারদেনা করে আর কতদিন সংসার চালাব! এরপর ফুটপাথে জামাকাপড় নিয়ে বসলেও খদ্দের পাওয়া মুশকিল হবে।’
চিত্তরঞ্জন এম এস গার্লস হাই স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী রূপালীর লক্ষ্য ভারতের হয়ে খেলা। সেই স্বপ্নপূরণের পথে এখন বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে করোনাকালের আর্থিক অনটন। এই অবস্থা কাটিয়ে কবে আবার পুরোপুরি ফুটবলে মন দিতে পারবে, এখন সেটারই অপেক্ষায়। খারাপের মধ্যে কিছুটা ভাল খবর, এই কঠিন সময়ে ওর পাশে আছে শ্রীভূমি এফ সি। কলকাতা থেকে ওই দূরের গ্রামে রূপালী ও অন্য খেলোয়াড়দের জন্য শ্রীভূমি এফ সি দু-দফায় পাঠিয়েছে খাদ্যসামগ্রী।