দীপঙ্কর বিশ্বাস গ্যাস সিলিন্ডারের ডেলিভেরি ম্যান ছিলেন। ভ্যানে করে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিতেন গ্যাসের সিলিন্ডার। তিন বছর আগে কাজের শেষে সাইকেলে বাড়ি ফিরছিলেন। রাস্তায় দুর্ঘটনায় পড়েন। কোমরে মারাত্মক চোট পান। সেই থেকে ওই কাজ আর করতে পারেন না। সংসার চালানোর জন্য কখনও রাস্তায় ঘুরে ঘুরে, আবার কখনও ফুটপাথে টেবিল পেতে বসে লটারির টিকিট বিক্রি শুরু করেন। এখন করোনার জেরে লটারির টিকিট বিক্রিও বন্ধ। রাস্তায় লোকই বের হন খুব কম। কে কিনবেন লটারির টিকিট! ফলে দীপঙ্কর এখন বেকার।
দীপঙ্করের স্ত্রী সবিতা বিশ্বাস পরিচারিকার কাজ করতেন, দু’বাড়িতে। করোনা আতঙ্কে ওই দুই বাড়ি থেকেই যেতে বারণ করেছেন সবিতাকে। ফলে সবিতাও এখন বেকার। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ওই কাজ আর থাকবে কিনা, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।
দীপঙ্কর-সবিতার ছেলে প্রীতম বিশ্বাস ফুটবল খেলে। শুধু খেলা নয়, বেশ ভালই খেলে। মোহনবাগানের অনূর্ধ্ব ১৫ আই লিগের দলের ফুটবলার। যে লিগ এখন করোনার কারণে বন্ধ হয়ে রয়েছে। বন্ধ হয়ে থাকা ওই আই লিগে ১০ ম্যাচে ৭ গোল করেছে। ২০১৯-এর শেষ দিকে বাংলার হয়ে খেলেছে সাব জুনিয়র জাতীয় ফুটবল প্রতিযোগিতা মির ইকবাল ট্রফিতে। বাংলা সেমিফাইনালে উঠেছিল। স্ট্রাইকার প্রীতমের গোল ছিল প্রাথমিক পর্বে ৭, মূলপর্বে ২। প্রীতম বলল, ‘মোহনবাগানের কোচ নাসিম স্যার আমার দিকে আলাদা নজর দেন।’ জানাল, মির ইকবাল ট্রফির বাংলা দলের কোচ অর্চিষ্মান বিশ্বাস, প্রশান্ত দে, নীলাঞ্জন গুহর কাছেও প্রীতম কৃতজ্ঞ। এখন ফুটবল বন্ধ। পেটের টানে ‘বেকার’ মা-বাবার পাশে দাঁড়াতে কাজে নেমে পড়েছে পূর্ব বারাসত আদর্শ বিদ্যাপিঠের ক্লাস নাইনের ছাত্র প্রীতম। ঢুকে পড়েছে এক রঙের মিস্ত্রির দলে। বাড়ি রঙের কাজ করছে। করোনার জের তো সেখানেও। রোজ কাজ পাওয়া সম্ভব নয়, পাচ্ছেও না। যেদিন কাজ থাকে, দিনের শেষে হাতে পায় ৩০০ টাকা। প্রীতম বলছিল, ‘সপ্তাহে দু-তিন দিনের বেশি কাজ পাই না। যা আয় হয়, তাতেই এখন চলে আমাদের সংসার।’
বারাসতের বাদু বাজারে প্রীতমদের বাড়ি। ওখানকার ‘OFINS’ কোচিং সেন্টারে অনির্বাণ চ্যাটার্জি নিয়ে গিয়েছিলেন প্রীতমকে। ওখানে প্রশিক্ষণ নেয় অরূপ ঘোষের কাছে। মোহনবাগানের অনূর্ধ্ব ১৩ দলের হয়ে যখন কলকাতায় খেলতে আসে কোচ হিসেবে পেয়েছিল অমিয় ঘোষকে। প্রীতম বলছিল, ‘বাড়ির অবস্থা খারাপ শুনে অমিয় স্যার অনেক সাহায্য করেছেন। বাবার অ্যাক্সিডেন্টের পর চিকিৎসার জন্যও টাকা দিয়েছিলেন।’