লুকিন মারান্ডী একসময় দিনমজুর ছিলেন। অনেকদিন ধরেই তিনি অসুস্থ। ডানহাত অসাড়। কোনও কাজ করতে পারেন না। ওঁর স্ত্রী অবনী পরিচারিকার কাজ করেন। যা এখন করোনা-আতঙ্কে প্রায় বন্ধ। ওঁদের ছেলে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে। সেখানেও এখন সমস্যা। কাজ রোজ পাওয়া সম্ভব নয়। ফলে সংসার প্রায় অচল। তবু লুকিন-অবনীর মেয়ে মোনালিসা মারান্ডী খেলার মাঠে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। করোনা-লকডাউনে মাঠে যাওয়া বেশ কিছুদিন বন্ধ ছিল। এখন পরিস্থিতি কিছুটা ভাল হতেই মোনালিসা আবার ফুটবল মাঠে যেতে শুরু করেছে। কারণ এই কঠিন সময়েও মোনালিসার স্বপ্ন মরেনি। খেলতে চায় ভারতের হয়ে।
বাংলার মহিলা ফুটবলে মোনালিসা এখন আছে একেবারে প্রথম সারিতেই। কলকাতা মহিলা ফুটবল লিগে শ্রীভূমি এফ সি-র মিডফিল্ডার মোনালিসা। লকডাউন শুরুর আগে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে বেঙ্গালুরুতে ইন্ডিয়ান উইমেন্স লিগেও শ্রীভূমি এফ সি-র হয়ে খেলে এসেছে। এর আগে স্কুল ন্যাশনাল, সাব জুনিয়র ন্যাশনাল, জুনিয়র ন্যাশনালে বাংলার হয়ে খেলেছে। সাব জুনিয়র (অনূর্ধ্ব ১৪) ন্যাশনালে বাংলার হয়ে প্রথম খেলে ২০১৭ সালে মনিপুরে। ২০১৮ সালে খেলেছে ত্রিপুরায় অনূর্ধ্ব ১৪ স্কুল ন্যাশনালে। গতবছর (২০১৯ সাল) খেলেছে অনূর্ধ্ব ১৪ ও অনূর্ধ্ব ১৭, দু’টি স্কুল ন্যাশনালেই। বাংলার প্রতিনিধিত্ব করেছে কোলাপুরে অনূর্ধ্ব ১৭ জুনিয়র জাতীয় ফুটবলেও। চিত্তরঞ্জন এম এস গার্লস হাই স্কুলের হয়ে অনূর্ধ্ব ১৭ সুব্রত কাপ ফুটবলেও খেলেছে। ওর উন্নতির গ্রাফটা বেশ ভালই।
পশ্চিম বর্ধমানের সালানপুর ব্লকের মালবহাল গ্রামের মেয়ে মোনালিসা। ওই গ্রামেই আছে এম আর বি সি গার্লস ফুটবল কোচিং ক্যাম্প। সেই ক্যাম্পেই সঞ্জীব বাউড়ীর কাছে মোনালিসার ফুটবল খেলা শুরু। এখনও খেলার জন্য কলকাতায় বা বাইরে না থাকলে ওখানেই নিয়মিত কোচিং নেয়।
চিত্তরঞ্জন এম এস গার্লস হাই স্কুলের ক্লাস নাইনের ছাত্রী মোনালিসা বলছিল, ‘সংসারের যা হাল, ঘরে বসে থাকলেই মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। কারও সঙ্গে হেসে কথাও বলতে পারছি না। মাঠে গেলে কিছুটা সময় অন্তত হেসে-খেলে কাটাতে পারছি। মনটা ভাল থাকছে। আর প্র্যাকটিস তো করতেই হবে। মাঝপথে বন্ধ হয়ে থাকা কলকাতা লিগে আমাদের শ্রীভূমি এফ সি ভাল জায়গায় আছে। আবার যদি খেলা শুরু হয়, আমাদের তার জন্য রেডি থাকতে হবে।’ মোনালিসা জানাল, ওদের সংসারের খারাপ অবস্থার কথা জানতে পেরে শ্রীভূমির কর্মকর্তারা দু’দফায় খাদ্যসামগ্রী পাঠিয়েছেন।