দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: ৯ বছর বয়সে বিহারের বাড়ি থেকে কলকাতায় পালিয়ে এসেছিল এখানকার পুজো দেখার জন্য। আর বিহারে ফিরে যাওয়া হয়নি। পরের ২১ বছর নানা ঝড়ঝাপ্টায়ও থেকে যাওয়া কলকাতাতেই। এখন আর কলকাতার পুজো দেখার আকর্ষণ নেই। শ্যামবাজারের রাস্তায় পুজোর ভিড় সামলাতে পুলিশকে সাহায্য করতে ব্যস্ত ৩০ বছরের রাম সাহানি। তিনি এখন ‘সিভিক পুলিশ’।
বাড়িতে মেডেল, সার্টিফিকেটের ছড়াছড়ি। বছরের পর বছর যা পেয়েছেন রাজ্য ও জাতীয় পর্যায়ের বক্সিং প্রতিযোগিতায় সোনা, রুপো বা ব্রোঞ্জ জিতে। বয়স ৩০ পেরিয়েও এখনও বক্সিং রিংয়ে তিনি সাবলীল। পদক জয়ের লক্ষ্যটা আগের মতোই। এখনও অনুশীলনে আন্তরিক। তবে করোনা-আতঙ্কে সব প্রতিযোগিতা বন্ধ, অনুশীলনেও নানা বিধিনিষেধ। ফলে এখন করছেন শুধু ফিজিক্যাল ট্রেনিং। কিন্তু এর বাইরেও তো কাজ আছে। করোনাকালের আগে সোদপুরের বাড়ি থেকে ভোরের ট্রেনে চলে আসতেন শিয়ালদহে। সেখান থেকে আলিপুর বডি গার্ড লাইন্সে। সেখানে অনুশীলন সেরে এন্টালি বাজারে। সেখানে মাছ কাটার কাজ করেন রাম। মাছের মাথা থেকে ব্রেন সংগ্রহ করেন। যা নানা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মাছের বংশ বৃদ্ধিতে কাজে লাগানো হয়। প্রায় একটা পর্যন্ত চলে ওই কাজ। তারপর চলে যান শ্যামবাজারে। সিভিক পুলিশের কাজ করেন। ট্রাফিক সামলাতে পুলিশকে সহায়তা করার কাজ। একদা বক্সার ছিলেন কলকাতা ট্রাফিক পুলিসের ও সি রাজকুমার সিং। তিনিই ২০১৮ সালে রামকে ওই ‘চাকরি’-র ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।


এখন অনুশীলন নেই, ফিজিক্যাল ট্রেনিংয়েও যেতে হচ্ছে না। বাকি দুটি কাজ চলছে আগের মতোই। বরং শ্যামবাজারে ট্রাফিক সামলানোর কাজটা আরও কঠিন হয়েছে, পুজোর ভিড়ে। তিনটেয় শুরু করে রাত ১২টা পর্যন্ত, কোনও দিন তারও বেশি থাকতে হচ্ছে। তারপর ফিরছেন বাড়িতে।
বাড়ি থেকে পালিয়ে আসা ছেলেটির বক্সিংয়ে আসার পেছনেও রয়েছে একটি গল্প। বিহার থেকে এসে মুচিপাড়ায় থাকার ব্যবস্থা করেছিল এক আত্মীয়ের বাড়িতে। একদিন ঘুড়ি ধরার জন্য দৌড়ে দৌড়ে পৌঁছে গিয়েছিল ওয়েলিংটনের মোড়ে। এখানে এস ও পি সি-র রিংয়ে তখন চলছিল বক্সিং অনুশীলন। যা দেখে ভাল লাগে রামের। ভর্তি হয়ে যায় ওখানে। অল্পদিনেই সাফল্য পাওয়া শুরু, বয়সভিত্তিক রাজ্য ও জাতীয় পর্যায়ে। জুনিয়র জাতীয় শিবিরেও একবার ডাক পেয়েছিল। ওর সঙ্গে সেই সময় জুনিয়র জাতীয় শিবিরে থাকা অনেকেই পরে আন্তর্জাতিক সাফল্য পেয়েছেন। সবচেয়ে বড় নাম বিজেন্দ্র সিং। কিন্তু আর্থিক কারণেই রাম সাহানি বিশেষ এগোতে পারেননি।
কলকাতায় থাকা, বক্সিং লড়া— কীভাবে চলবে খরচ? তাই বক্সিং শুরুর সঙ্গে সঙ্গে ১৯৯৯ সালে মাছ কাটার কাজেও যোগ দেওয়া। ব্যবসাটা রামের ওই আত্মীয়েরই। তাঁর কাছেই কাজ করেন রাম।
একসময় আরও অনেকের মতো রামেরও স্বপ্ন ছিল অলিম্পিক। সেই স্বপ্নের অকাল মৃত্যু ঘটেছে অনেক আগেই। তবু এখনও বক্সিংয়ের প্রতি ভালবাসা একটুও কমেনি। বলছিলেন, ‘করোনার ঝামেলা কেটে কবে আবার সব ঠিক হবে! সেদিকেই তাকিয়ে আছি। আবার ভাল করে প্র্যাকটিস করতে হবে। মেডেল জিততে হবে।’