Gorib manus er notun jama kapor asha kora ta uchit na amar notun jama kapor hoyni tai pujo te kothao ghurte jai ni
(গরীব মানুষের নতুন জামা কাপড় আশা করাটা উচিত না। আমার নতুন জামা কাপড় হয়নি। তাই পুজোতে কোথাও ঘুরতে যাইনি।)
পুজোর কয়েকটা দিন ফেসবুকে অজস্র মানুষের নানান পোস্ট। সেজে ঘুরতে বের হওয়া থেকে রেস্তোরাঁয় বসে খাবারের ছবি। আরও কত কী! ওই ফেসবুকেই বিজয়ার দিন ওপরের ওই কয়েকটা শব্দ পোস্ট করেছেন বাংলার পরিচিত ভলিবলার তৃষা (পিয়ালি) ধর। বলার অপেক্ষা রাখে না, পোস্টটা গভীর হতাশা বা দুঃখ থেকে। হাজার মানুষের হাজার পোস্টের মাঝে তৃষার ওই ছোট পোস্টটা হারিয়ে গিয়েছে বা দেখেও না দেখার ভান করেছেন অনেকেই। গত ২৩ ঘণ্টায় লাইক মাত্র ১১ টি।


করোনা ও আমফানের জেরে গত সাত মাসে হাজার হাজার মানুষ কর্মহীন। খাবারই জুটছে না। আবার পুজোয় নতুন জামা!তৃষার পরিবারের অবস্থাও ওই একইরকম খারাপ। তৃষার বাবা রতন ধর সিকিউরিটি গার্ডের কাজ করেন। এমনিতেই টেনেটুনে চলে সংসার। করোনাকালে সেই কাজও অনিয়মিত। রোজ কাজ থাকে না। ফলে আয়ও কমে গিয়েছে। তার ধাক্কা পড়েছে সংসারে। কী করে মেয়েকে দেবেন পুজোয় নতুন পোশাক!
তৃষার ভলিবল খেলা শুরু নৈহাটি এ সি-তে। স্থানীয় ভলিবলে ওই ক্লাবের হয়েই খেলে সব প্রতিযোগিতায়। মাঝে একবছর খেলেছে সালকিয়া অ্যাসোসিয়েশনের হয়ে। নৈহাটির মেয়ে তৃষা বেশ কয়েকটি বয়সভিত্তিক ন্যাশনাল ও স্কুল ন্যাশনালে বাংলার হয়ে খেলেছে। প্রথম বাংলার প্রতিনিধিত্ব করে ২০১৩ সালে উত্তর প্রদেশে মিনি ন্যাশনালে। সেখানে বাংলা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। ২০১৫ সালে তাইলনাড়ুতে মিনি ন্যাশনালে রানার্স বাংলা দলের হয়ে খেলেছে। ওই বছরই তেলেঙ্গানায় সাব জুনিয়র জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলার মেয়েরা। সেই দলেও ছিল তৃষা। ২০১৭-তে পন্ডিচেরিতে সাব জুনিয়র ও ২০১৮-য় চণ্ডীগড়ে জুনিয়র ন্যাশনালে বাংলার প্রতিনিধিত্ব করে। দু’বারই বাংলা চ্যাম্পিয়ন। স্কুল ন্যাশানালে খেলেছে বাংলার হয়ে দু’বার। ২০১৮-১৯ জম্মুতে বাংলা রানার্স। প্রতিযোগিতার সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পেয়েছিল বাংলার লিবেরো তৃষা। ২০১৯-২০ তামিলনাড়ুতে বাংলা চ্যাম্পিয়ন। সেই দলেরও গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিল তৃষা।


পুজোয় নতুন পোশাক না হওয়ার কথা পোস্ট করলেও তৃষা বলল, ‘শুধু আমার কেন এবার তো এরকম অনেকেরই পুজোয় জামা কাপড় কেনা হয়নি। কী আর করা যবে! লোকের খাওয়াই জুটছে না, আর নতুন ড্রেস!’
এই বাংলাতেই তো উৎসবের দিনে পুরোহিত ভাতা আছে। সাংবাদিকদের সরকার ‘বোনাস’ দিচ্ছে। কিছু নামী প্রাক্তন খেলোয়াড় পুজোয় পেয়েছেন নতুন পোশাকও। কয়েকজন যা ফেসবুকে হাসিমুখে পোস্ট করে কৃতজ্ঞতাও জানিয়েছেন। আরও কত কী! কিন্তু খেলাধুলোয় বাংলার যারা ভবিষ্যৎ তাদের দিকে তাকানোর সময় কারও হয়নি। তাই তৃষার মতো অনেকের গায়েই ওঠেনি নতুন পোশাক। ফেসবুকে পোস্ট করে যা তৃষাকে জানাতেও হয়।