কলকাতার চারুচন্দ্র কলেজের ছাত্র। এবছরই জানুয়ারি মাসে বেঙ্গালুরুতে সর্বভারতীয় আন্তঃ বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাথলেটিক্স মিটে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব করেছে। নাম সাগর আচার্য্য। মাঝারিপাল্লার রানার। বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার সোদপুরের ঘোলায়। সাগরের বাবা অজয় আচার্য্য পুরোহিত। মা রীতা আচার্য্য ওখানকার তিন বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতেন। করোনা-লকডাউনের জেরে আরও অনেক পেশার মতো পুরোহিতদেরও সময় খারাপ যাচ্ছে। ফলে কাজ নেই অজয়ের। করোনা-আতঙ্কে তিন বাড়ি থেকেই রীতাকে এখন যেতে বারণ করে দিয়েছে। প্রথম মাসের মাইনে পেলেও এখন আর পাচ্ছেন না। কী করে চলবে সংসার? প্রথম দিকে মোটামুটি চালিয়ে নিচ্ছিলেন। কিন্তু লকডাউন বাড়তে শুরু করায় সংসার আর চালাতে পারছিলেন না অজয়-রীতা। দ্বিতীয় দফার লকডাউন শুরু হতেই আয়ের খোঁজে তাই পথে নেমে পড়ে সাগর। সাইকেলে করে পাড়ায় পাড়ায় মাছ বিক্রি শুরু করে। কিন্তু ১৫/১৬ দিন পরই সেই কাজ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। সাগর বলল, ‘মোটামুটি বিক্রি হচ্ছিল। সংসারটা টেনেটুনে চলে যাচ্ছিল। কিন্তু কিছু দিন যেতেই কোনও পাড়ায় আর ঢুকতে পারছিলাম না। পাড়ার লোকেরা ঢুকতে দিচ্ছিলেন না, করোনা-ভাইরাস ঢুকে যাবে এই আশঙ্কায়। কিছু করার ছিল না, মাছ বিক্রি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হই।’
২০১৫ সালে রাজ্য অ্যাথলেটিক্সে অনূর্ধ্ব ১৬ বিভাগে ৮০০ মিটারে সোনা জিতেছিল সাগর। তারপরও রাজ্য প্রতিযোগিতায় বয়সভিত্তিক বিভাগে একাধিক পদক জিতেছে। অংশ নিয়েছে বাংলার হয়ে পূর্বাঞ্চল মিটে, বাংলা স্কুল দলের হয়ে জাতীয় স্কুল অ্যাথলেটিক্সে। ২০১৬ সালে রাজ্য ক্রশকান্ট্রি প্রতিযোগিতায় অনূর্ধ্ব ১৬ বিভাগে (২ কিলোমিটার) চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। কোচ সীতাংশু আচার্য্যর কাছে অনুশীলন করে বাড়ির কাছাকাছি নেতাজী সঙ্ঘে। মাঝেমধ্যে কলকাতায় আসে কোচ সুখেন মণ্ডলের কাছে। মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে অনুশীলন বন্ধ। অন্যদের মতোই বাড়িতে শরীরচর্চা করা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। শরীরচর্চার পর ঠিক ভাবে খাবার পাওয়ারও পথ নেই। সাগর বলল, ‘মা, বাবার কাজ নেই। আমাকেও মাছ বিক্রি বন্ধ করে দিতে হল। আমার কোচ, আরও কয়েকজন কিছু সাহায্য করছেন। আর ধার-দেনা করে সংসার চলছে। সাধারণ খাবারই জোটাতে হচ্ছে অনেক কষ্ট করে। অ্যাথলেটিক্সের জন্য পুষ্টিকর খাবার কোথায় পাব!’