বিয়ে ও নানা অনুষ্ঠান বাড়িতে রান্নার কাজ করেন শান্তি হালদার। ৯ বছর আগে স্বামী বিশ্বনাথ হালদার মারা গিয়েছেন। সেই থেকে রান্নার কাজ করেই সংসার চালান। মেয়ে প্রিয়ঙ্কা ও ছেলে শুভকে নিয়ে ওঁর সংসার, কাঁচড়াপাড়ার ৪-এর পল্লীর বেদিভবনে। আরও অনেক পরিবারের মতো করোনার ধাক্কা লেগেছে শান্তি হালদারের সংসারেও। ৪ মাসের বেশি কোনও কাজ নেই। দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে পড়েছেন গভীর সঙ্কটে। ফ্রি রেশনই এখন সংসারের সবচেয়ে বড় ভরসা।
শান্তি হালদারের মেয়ে প্রিয়ঙ্কা বাংলার সম্ভাবনাময়ী অ্যাথলিটদের তালিকায় রয়েছে প্রথম সারিতেই। এবছর রাজ্য অ্যাথলেটিক্স হয়নি। আর হবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। গত বছর, ২০১৯ সালে রাজ্য অ্যাথলেটিক্সে নদীয়া জেলার হয়ে অনূর্ধ্ব ১৮ বিভাগে দুটো রুপোর পদক জিতেছিল প্রিয়ঙ্কা। ১০০ মিটার দৌড় ও ৪x১০০ মিটার রিলেতে। ১০০ মিটারে ওর সময় ছিল ১২.৭ সেকেন্ড। তার আগে ২০১৮ সালে রাজ্য অ্যাথলেটিক্সে অনূর্ধ্ব ১৬ বিভাগে এবং ২০১৬-য় রাজ্য মিটে অনূর্ধ্ব ১৪ বিভাগে ১০০ মিটার দৌড়ে সোনা জিতেছে। পূর্বাঞ্চল অ্যাথলেটিক্সে সোনা জিতেছে ২০১৬ (অনূর্ধ্ব ১৪) ও ২০১৮ সালে (অনূর্ধ্ব ১৬)। বাংলার হয়ে অংশ নিয়েছে বয়সভিত্তিক জাতীয় প্রতিযোগিতায়ও।
চাঁদমারি নগেন্দ্রবালা বালিকা বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী প্রিয়ঙ্কা বলছিল, ‘কীভাবে আমাদের সংসার চলছে, বলে বোঝাতে পারব না! ফ্রি রেশন পাচ্ছি, তাই না-খেয়ে থাকতে হচ্ছে না। আমার স্যার (কোচ গোপাল দেবনাথ) মাঝে মাঝে খাবার দিয়ে যান। আর আছেন পাড়ার কাকারা। ওঁরা বিস্কুট, এটাওটা কিনে দেন। সাহায্য করেন। এভাবেই আমরা বেঁচে আছি!’
‘বেঁচে’ থাকলেও খেলাধুলো কী করে চলবে, বুঝে উঠতে পারছে না প্রিয়ঙ্কা। ওর অ্যাথলেটিক্স-ভবিষ্যৎ এখন একটা বড় প্রশ্ন চিহ্নের সামনে। প্রিয়ঙ্কা নিজেই WhatsApp-এ ওর দুরবস্থার কথা লিখে পাঠিয়েছে। প্রিয়ঙ্কা লিখেছে, ‘আমরা দুই ভাইবোন। মা আমাদের নিয়ে সংসার চালাচ্ছিল। কিন্তু এই লকডাউনে খুবই অসুবিধায় পড়েছি। মা এখন রান্নার কাজে যেতে পারছে না। রেশনে যা দিচ্ছে তাই দিয়ে চালাচ্ছি। আর আমি যে ক্লাবে প্র্যাকটিস করি, সেই J A C C (জোনপুর অ্যাথলেটিক্স কোচিং সেন্টার) ক্লাবও আমাকে অল্পবিস্তর সাহায্য করছে। আর আমি যাদের হয়ে নদীয়া জেলা মিটে অংশ নিই সেই গয়েশপুর ক্রিকেট ক্লাবও কিছুটা সাহায্য করছে। তবে একজন খেলোয়াড়ের জন্য বিশেষ যে খাবার, তা তো পাচ্ছি না। খুব চিন্তায় আছি। লকডাউন আরও বাড়লে কী করব বুঝতে পারছি না। তাই আমাদের পরিবারের পাশে দাঁড়ালে খুবই উপকার হয়। আমি অ্যাথলেটিক্স চালিয়ে যেতে পারি।’
সত্যি, করোনা এবং কিছু কিছু জেলায় আমফানের ধাক্কায় গভীর সঙ্কটের মুখে বাংলার দরিদ্র পরিবারের উঠতি খেলোয়াড়রা। কেউ কেউ হয়ত ভবিষ্যতে আর খেলাধুলো চালিয়ে যেতেই পারবে না।