চন্দননগরের মাধবপুর গ্রামের হেমন্ত মণ্ডল অন্যের জমিতে ধান চাষ করেন। স্বাভাবিক সময়েই আয় ছিল অতি সামান্য। করোনার থাবায় হেমন্তর চাষের কাজ অনেক দিন বন্ধ থাকার পর এখন আবার টুকটাক যেতে শুরু করেছেন। সামান্য আয়ও এখন নেই বললেই চলে। তাঁর মেয়ে দোয়েল কবাডি খেলে। নিজের খরচ চালানোর জন্য পাড়ার একটি বাচ্চাকে পড়াত। মাসে হাতে আসত ২৫০ টাকা। লকডাউনের শুরু থেকেই দোয়েলের ওই আয়টা বন্ধ। স্ত্রী মিতালি, মেয়ে দোয়েল, ছেলে অপূর্বকে নিয়ে হেমন্তর ৪ জনের সংসারে এখন গভীর অর্থ-সঙ্কট। প্রতিদিন পেট ভরে খাবার জুটছে না। কিছুটা ভরসা সরকারের ফ্রি রেশন।
বাংলার কবাডিতে দোয়েল মণ্ডল এক ঊজ্জ্বল তারকা। কবাডি খেলোয়াড় হিসেবে ওর সাফল্যের তালিকাটি দীর্ঘ। বাড়িতে পুরস্কার, সার্টিফিকেটের ছড়াছড়ি। কিন্তু গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারের ঘরের শোভা বাড়ানো ছাড়া এখন ওগুলোর কোনও ভূমিকা নেই। চাকরির চেষ্টা করতে করতে ক্লান্ত দোয়েল বুঝে ফেলেছে, ওই সব পুরস্কার, সার্টিফিকেট দিয়ে আর যাই হোক পেট ভরবে না। দোয়েল বলল, ‘বাড়িতে অর্থের অভাব তো ছিলই। তবু কবাডি খেলা যখন শুরু করেছিলাম, ভেবেছিলাম খেলে একটা চাকরি পেলে সংসারের হাল ফিরবে। কিন্তু অনেক চেষ্টা করে এখনও চাকরি হয়নি! আর খারাপ অবস্থাটা আরও খারাপ করে দিয়েছে করোনা, লকডাউন।’


২০১৭ সালে কটকে জুনিয়র জাতীয় কবাডি প্রতিযোগিতায় দোয়েল বাংলার হয়ে প্রথম খেলে। সিনিয়র ন্যাশনালে বাংলার প্রতিনিধিত্ব করেছে দু’বার। ২০১৮ সালে হায়দরাবাদে এবং এবছর (২০২০) লকডাউন শুরুর আগে মার্চ মাসের গোড়ায় রাজস্থানের জয়পুরে। এছাড়া একাধিকবার বর্ধমান ইউনিভার্সিটির হয়ে অংশ নিয়েছে পূর্বাঞ্চল ও সর্ব ভারতীয় আন্তঃ বিশ্ববিদ্যালয় কবাডি প্রতিযোগিতায়। গত বছর খেলো ইন্ডিয়া গেমসেও বাংলার হয়ে অংশ নিয়েছে। এরকম সাফল্যের পরও চাকরি হয়নি। দোয়েল বললেন, ‘হবে হবে করেও হয়নি। আর এখন তো লকডাউনে অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গেল। আর চাকরি হবে কিনা, জানি না!’
বারবার দোয়েল বলছিল, ‘দুর্দশার কথা কী আর বলব! আমরা কীভাবে বেঁচে আছি, বলে বোঝাতে পারব না। ভীষণ খারাপ অবস্থায় আছি। চাষ থেকে বাবার বেশি আয় কোনও দিনই ছিল না। টিউশন থেকে আমি আড়াইশো টাকা পেতাম। সব মিলিয়ে সংসারটা কোনওরকমে চলে যেত। লকডাউনে দারিদ্র্যের শেষ সীমায় আমরা। ফ্রি রেশনের জন্য আর যাই হোক খেতে পাচ্ছি। তা না হলে না খেয়েই থাকতে হত।’
নবগ্রাম কল্যাণ সঙ্ঘে কোচ দীপ্তি ভট্টাচার্য্যের কাছে অনুশীলন করে দোয়েল। বলল, ‘পাশে ম্যাডাম আছেন, এটা বড় ভরসা। সব সময়ই ম্যাডাম আমার পাশে থাকেন। এখনও আছেন। সাহায্য করছেন। ম্যাডামের জন্যই এত কষ্টেও লকডাউনের শেষে আবার কোর্টে নামার জন্য তৈরি হচ্ছি।’