সিঙ্গুর থানার ন’পাড়ার বাগডাঙা। ওখানকার রায় পাড়ায় খালপাড়ে সরকারি জমিতে ঘর তুলে দিন কাটায় অনেক পরিবারই। এটা নতুন কিছু নয়। অনেক পুরনো ছবি। ওখানেই টালির চালের ঘরে বেড়ে উঠছে তনুশ্রী রায়। বাংলার কবাডিতে অনেকটাই পরিচিত নাম। করোনা-লকডাউন শুরুর মাস দুয়েক আগেও জানুয়ারিতে হরিয়ানার রোহতকে জুনিয়র জাতীয় কবাডি প্রতিযোগিতায় বাংলার হয়ে খেলে এসেছে। কিন্তু লকডাউন ওর কবাডি-ভবিষ্যৎকে বিশাল প্রশ্নচিহ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
তনুশ্রীর বাবা সমর রায় ভ্যান চালক। মার্চের শেষ দিকে লকডাউন শুরুর সময় থেকেই ভ্যান চালানো বন্ধ। লকডাউন কিছুটা শিথিল হলেও পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক নয়। ফলে প্রায় পাঁচ মাস হতে চলল ভ্যান নিয়ে রুজির খোঁজে বের হতে পারছেন না। আটকে আছেন ঘরেই। স্বামী-স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে ৪ জনের সংসার। দারিদ্র্যে ভরপুর সংসারে এই লকডাউনে আরও অন্ধকার নেমে এসেছে।
একসময় সংসারে দারিদ্র্য থাকলেও বড় মেয়ে তনুশ্রীকে খেলার মাঠে পাঠিয়েছিলেন সমর। ভেবেছিলেন খেলাধুলো করে মেয়ে একটা চাকরি পেয়ে সংসারের হাল ফেরাবে। চন্দননগর কল্যাণ সঙ্ঘে গিয়ে বছরের পর বছর কবাডি অনুশীলনে মেয়েকে উৎসাহিতই করেছেন। ওখানে কোচ দীপ্তি ভট্টাচার্যের তত্ত্বাবধানে অনুশীলন করে ধারাবাহিক উন্নতিও করেছে তনুশ্রী। পেয়েছে সাফল্য। বাংলার হয়ে ২ বার সাব জুনিয়র জাতীয় প্রতিযোগিতায় খেলেছে। ২০১৭ ও ২০১৯ সালে। খেলো ইন্ডিয়ায় খেলেছে ২ বার, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে। শেষবার বাংলা তৃতীয় স্থান পেয়েছিল। মেয়ের একের পর এক সাফল্য সমরকে গর্বিতও করেছে। কিন্তু এখন বুঝছেন ওই ‘গর্ব’ দিয়ে আর পেট ভরছে না। তিনি এখন কঠিন বাস্তবের মুখে দাঁড়িয়ে ভাবছেন, মেয়েকে আর খেলার মাঠে পাঠাতে পারবেন কিনা! ফোনে সমর বলছিলেন, ‘সংসারের অবস্থা মুখে বলে বোঝাতে পারব না। পারলে একবার এসে দেখে যেতে পারেন, কী করুণ অবস্থায় আমরা আছি। এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠে মেয়েকে আর খেলার মাঠে পাঠাতে পারব, একথা জোর দিয়ে বলতে পারছি না।’ ফ্রি রেশন পাচ্ছেন। শাঁক-পাতা জোগাড় করে কোনওভাবে খাওয়া চলছে।
একাদশ শ্রেণির ছাত্রী তনুশ্রীর ক্লাবে যাওয়াও বন্ধ সেই লকডাউনের শুরু থেকেই। ও নিজেও বুঝতে পারছে খেলোধুলোর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। তবু স্বপ্নটা এখনও জিইয়ে রেখেছে। বলল, ‘বাড়ির সামনে কিছুটা ফিজিক্যাল ট্রেনিং করছি। বাবা লড়ছেন, আমিও লড়ছি। দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত খেলাটা ধরে রাখতে পারি কিনা!’