মীর তায়েব আলি। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙ্গরের ফুলবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা। নিজের অল্প জমি আছে। চাষ করেন। পাশাপাশি এক রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে। গ্রামে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ যেমন নিয়মিত থাকে না। সামান্য জমিতে চাষ থেকেও আয় অনিয়মিত। ফলে দুই কাজ থেকেই আয় যৎসামান্য। সেই আয়ও এখন পুরোপুরি বন্ধ। লকডাউন শুরুর পর থেকে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ একদিনও পাননি। আর আমফানের তাণ্ডবে তছনছ হয়ে গিয়েছে চাষের জমি। যাকে এখনও নতুন করে চাষ শুরুর অবস্থায় আনা যায়নি। এখানেই শেষ নয়। বাড়ি-ঘরও ভেঙে চৌচির। আবেদন করেও এখনও সরকারি সাহায্য হাতে পাননি। ফলে বাড়ি-ঘর সারানোও হয়ে ওঠেনি। শুধু তায়েব আলির নয়, গ্রামের অনেকেরই এখন এরকম করুণ অবস্থা। কিন্তু তায়েব আলির কথা আলাদা করে বলার কারণ, ওঁর মেয়ে তহুরা খাতুন।


বাংলার প্রতিশ্রুতিময়ী অ্যাথলিটদের একজন তহুরা। গত বছর, ২০১৯ সালে রাজ্য স্কুল অ্যাথলেটিক্সে (অনূর্ধ্ব ১৪) জোড়া সোনা জিতেছে। ৮০ মিটার হার্ডলস ও ৬০০ মিটার দৌড়ে। পাঞ্জাবে জাতীয় স্কুল গেমসে ৮০ মিটার হার্ডলসে জিতেছে ব্রোঞ্জ পদক। একই বছরে রাজ্য আন্তঃ জেলা অ্যাথলেটিক্সে দক্ষিণ ২৪ পরগনার হয়ে ১০০ মিটার দৌড়ে তৃতীয় ও ৬০০ মিটার দৌড়ে দ্বিতীয় হয়েছে। অংশ নিয়েছে জাতীয় আন্তঃ জেলা অ্যাথলেটিক্সেও। ২০১৮ সালেও রাজ্য স্কুল অ্যাথলেটিক্সে ৮০ মিটার হার্ডলসে সোনা জিতেছিল। অংশ নিয়েছিল জাতীয় স্কুল গেমসেও।


অ্যাথলেটিক্সে এগোচ্ছিল বেশ ভালভাবেই। কিন্তু করোনা ও আমফান এসে সব হিসেব বদলে দিয়েছে। বিপর্যয় সামলে আরও অনেকের মতো ভাঙ্গর এ এইচ হাই মাদ্রাসার ক্লাস নাইনের ছাত্রী তহুরা খাতুনও ট্র্যাকে ফেরার জন্য দিন গুনে চলেছে। সাগর সঙ্ঘে কোচ মিরাতুন নাহেরের কাছে প্র্যাকটিস করে তহুরা। বলছিল, ‘সব তালগোল পাকিয়ে গেছে। দিনদিন হতাশ হয়ে পড়ছি। কতদিন ঠিক মতো প্র্যাকটিস করতে পারছি না। ট্র্যাকে ফিরতে পারলে মুক্তি পাই।’


তহুরা ট্র্যাকে ফেরার অপেক্ষায় থাকলেও চিন্তায় ওর বাবা তায়েব আলি। তিনি বলছিলেন, ‘কাজ নেই। আয় নেই। কিন্তু খরচ আছে। সংসার আর চলছে না। ভাঙা ঘর এখনও সারিয়ে উঠতে পারিনি। খেলতে গেলে ভাল খাবার দরকার। আগে মেয়েকে সেটা দিতে চেষ্টা করতাম। এখন তো পেট ভরে খাবারই জুটছে না। ওকে আলাদা করে ভাল খাবার কোথা থেকে দেব! ওর মাঠে যাওয়াই হয়ত বন্ধ হয়ে যাবে।’