করোনা-লকডাউন শুরু হতেই অথৈ জলে পড়েছিল পলাশ হালদার। জলপাইগুড়ির সাই হস্টেল বন্ধ হয়ে যায়। শিক্ষার্থীদের হস্টেল ছেড়ে দিতে বলা হয়। অন্যরা কয়েকদিন আগে চলে গেলেও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য পলাশকে থেকে যেতে হয়। পরে পরীক্ষা বাতিল হয়ে গেলেও ওর বাড়ি ফেরার উপায় ছিল না। হস্টেলও বন্ধ। বাস-ট্রেন চলছে না। গভীর সমস্যায় তখন ওখানকার সাইয়ের শিক্ষার্থী-অ্যাথলিট পলাশ। যার বাড়ি বনগঁার নলডুগারি গ্রামে। ওর বন্ধু অ্যাথলিট জয়দেব রায়ের বাড়ি জলপাইগুড়িতেই। সেই বাড়িতেই ২ মাস থেকে যেতে হয় পলাশকে। পরে সরকারি বাস চালু হলে জলপাইগুড়ি জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্তা উজ্জ্বল দাস চৌধুরি উদ্যোগ নিয়ে ওর বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করেন। বনগাঁ স্টেশন থেকে বাসে এক ঘণ্টা দূরত্বের গ্রামের বাড়িতেই এখন আটকে আছে পলাশ। কবে আবার সাই সেন্টারে ফিরতে পারবে, পেট ভরে খেতে পারবে, জানে না।


গত বছর রাজ্য অ্যাথলেটিক্সে জলপাইগুড়ি জেলা দলের হয়ে অনূর্ধ্ব ২০ বিভাগে ৪০০ মিটারে রুপো ও ২০০ মিটারে ব্রোঞ্জ জিতেছে পলাশ। পূর্বাঞ্চল মিটে ৪০০ মিটারে ব্রোঞ্জ। ২০১৮ সালে রাজ্য অ্যাথলেটিক্সে (অনূর্ধ্ব ১৮) জিতেছিল ৪০০ মিটারে সোনা। সেবার ৪০০ মিটারে পূর্বাঞ্চল মিটে রুপো, ইউথ ন্যাশনালে ব্রোঞ্জ। অংশ নিয়েছিল জুনিয়র ন্যাশনালেও। ২০১৭-য় রাজ্য মিটে (অনূর্ধ্ব ১৮) ৪০০ মিটারে জিতেছিল রুপো। পূর্বাঞ্চল মিটে (অনূর্ধ্ব ১৬) ৪০০ মিটারে সোনা।
ট্র্যাকে পদক জিতলেও বাড়ির দুরবস্থার শেষ নেই। কয়েক বছর আগে সাইয়ে সুযোগ পেয়ে নিশ্চিত হয়েছিল খেলাধুলোর জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা, খাবার পাবে। পেয়েওছিল। তাতে ওর উন্নতিও হচ্ছিল। কিন্তু করোনার ধাক্কায় এখন নাজেহাল। পলাশ বলছিল, ‘বাড়ির যা অবস্থা, খাওয়া-দাওয়াই ঠিক মতো হচ্ছে না। আর খেলাধুলোর জন্য বাড়তি খাবার কোথায় পাব!’
পলাশের বাবা সুদেব হালদার চাষী। নিজের কোনও জমি নেই। অন্যের জমিতে দৈনিক মজুরিতে কাজ করেন। করোনা-আতঙ্কে অনেকদিন কাজ বন্ধ ছিল। যখন আবার কাজ পাবেন ভাবছিলেন, তখনই আমফান। জমি নষ্ট হয়ে যায়। ফলে কাজ আর পাচ্ছিলেন না। এই সপ্তাহ থেকে আবার কাজে যেতে শুরু করেছেন। পলাশের মা দীপালি হালদার বাড়িতে বিড়ি বাঁধেন। লকডাউন শুরুর সঙ্গে সঙ্গে সেই কাজও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। অর্ডার পাচ্ছিলেন না। দিন তিনেক আগে আবার শুরু করেছেন বিড়ি বাঁধা। পলাশ এখন বাড়িতে। তাই বিড়ি বাঁধার কাজে সাহায্য করছে মা-কে। পলাশ বলছিল, ‘মা, বাবার এতদিন কাজ না থাকায় যা হওয়ার তাই হয়েছে। খাওয়া-দাওয়া রেশনে ফ্রি পাওয়া চাল দিয়ে কোনওভাবে চলছে। তারপর আমফানে বাড়ির অনেক ক্ষতি হয়েছে। সরকারের সাহায্য পাওয়ার জন্য ফর্ম ফিলাপ করে জমা দিয়েছেন বাবা। এখনও টাকা আসেনি। কবে আসবে জানি না!’
মনের আনন্দে দৌড়তে, পেট ভরে খেতে সাই সেন্টারে ফেরার অপেক্ষায় এখন দিন গুনছে পলাশ।