অনেক বছর আগের কথা। সাল, তারিখ এখন আর মনে নেই। আমার সহকর্মী সদ্য প্রয়াত রনি রায়ের বিয়ের অনুষ্ঠান। আমাদের পুরনো অফিসের কাছাকাছি কেশব সেন স্ট্রিটের এক ভাড়া বাড়িতে। খবরের কাগজের অফিসের কাজ সেরে একটু বেশি রাতেই গিয়েছি ওখানে।
খাওয়া-দাওয়ার একেবারে শেষ পর্যায়ে আইসক্রিম এক চামচ মুখে দিয়েই ফেলে দিলাম। দেখতে পেয়েই রনি জিজ্ঞেস করল, ‘টেস্ট খারাপ?’
ছোটবেলা থেকেই আমার দাঁতের নানান সমস্যা। কয়েকদিন ধরেই দাঁতের সেই সমস্যায় বেশ ভুগছিলাম। আইসক্রিমের ঠাণ্ডা দাঁত নিতে না পারাতেই বিপত্তি। দাঁতের ওই সমস্যার কথা জানাতেই রনি বলল, ‘ঠিক আছে, দাঁত ঠিক হোক, পরে একদিন আইসক্রিম খাইয়ে দেব।’
ওর বিয়ের পর বেশ কয়েক বছর কেটে যায়। ফটোগ্রাফাররা অফিসে কম আসে। ফলে ওর সঙ্গে দেখাও কম হত। তবু মাঝেমধ্যে দেখা হলে ওই আইসক্রিমের কথা উঠত। কখনও রনি তুলত, কখনও আমি। হয়ত আমি বলতাম, ‘কী হল রনি, আইসক্রিমটা আর খাওয়াবে না?’ রনি উত্তর দিত, ‘আগে বিয়ে করো, বৌদি আর তোমাকে একসঙ্গে আইসক্রিম খাইয়ে দেব।’ অন্য অনেক ভাবেও ওই আইসক্রিম নিয়ে কথা হত।


ওই বাকি থাকা আইসক্রিমটা রনি অবশেষে খাইয়েছিল কলকাতা থেকে অনেক দূরে কৃষ্ণনগরে। কলকাতা থেকে গাড়িতে কালিগঞ্জে গিয়েছিলাম অ্যাথলিট ঝুমা খাতুনের বাড়ি। সেখান থেকে বহরমপুরে কোচ সত্যরঞ্জন রায়ের কাছে। সন্ধ্যায় ক্লান্ত হয়ে কলকাতা ফেরার পথে কৃষ্ণনগরে গাড়ি থামিয়ে আমরা নেমেছিলাম অধরের বিখ্যাত সরপুরিয়া কিনতে। কাছেই ছিল আইসক্রিমের দোকান। সেবার আর ‘ফাঁকি’ দেয়নি রনি। কিন্তু এবছর ২৪ এপ্রিল রনি আমাকে, আমাদের অনেক বড় ‘ফাঁকি’ দিল! একেবারে বিনা নোটিশেই, ওর জন্য কিছু করার সুযোগ না দিয়েই চলে গেল অজানা দেশে। যা এখনও কষ্ট দেয়।