ভুবনেশ্বরে অনুষ্ঠিত ২০১৯-২০ সিনিয়র ন্যাশনাল ভলিবলে বাংলার মহিলা দল চতুর্থ স্থান পেয়েছে। এর পরপরই ২০২০-র গোড়াতেই রাজস্থানে ফেডারেশন কাপ ভলিবলে তৃতীয় হয়েছে বাংলা। ওই দুই দলেই ছিল সুপ্রিয়া বেরা। বাংলার হয়ে প্রথম সাব জুনিয়র জাতীয় ভলিবলে খেলেছিল ২০১২ সালে। তারপর একাধিকবার জুনিয়র ও ইউথ জাতীয় ভলিবল প্রতিযোগিতায় বাংলার প্রতিনিধিত্ব করেছে এই প্রতিভাময়ী ভলিবলার।
সুপ্রিয়া এন সি সি ন্যাশনালে খেলেছে ২ বার, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে। দু’বারই সুপ্রিয়ার দল চ্যাম্পিয়ন। ২০১৮-য় বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে পূর্বাঞ্চল এবং সর্বভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ভলিবলে অংশ নিয়েছে। সেবার বর্ধমান ছিল পূর্বাঞ্চল চ্যাম্পিয়ন। পরে সুপ্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয় বদল করে। অ্যাডামাস ইউনিভার্সিটির হয়ে খেলতে শুরু করে সে। ২০১৯-এ পূর্বাঞ্চল বিশ্ববিদ্যালয় ভলিবলে চ্যাম্পিয়ন হয় অ্যাডামাস ইউনিভার্সিটি। সেই দলেও ছিল সুপ্রিয়া।
স্থানীয় সালকিয়া অ্যাসোসিয়েশনের হয়ে ভলিবলে যাকে খেলতে দেখা যায় সেই সুপ্রিয়ার সাফল্যের গ্রাফটা বেশ উল্লেখযোগ্যই। কিন্তু দরিদ্র পরিবারের মেয়েটি করোনা-লকডাউনে গভীর আর্থিক সঙ্কটের মুখোমুখি। ওকে নিয়ে লিখতে চাই, এটা শুনেই ফোনে বলল, ‘আমাকে নিয়ে লিখলে, কেউ কি সাহায্য করবেন? জানেন ভীষণ কষ্টে আছি! কেউ সাহায্য করলে খেয়ে বাঁচতে পারি।’
তারকেশ্বরের কলেজ রোডের সাহা পাড়ায় সুপ্রিয়াদের বাড়ি। বাবা অশোক বেরা রিকশা চালান। মার্চ মাসে লকডাউন শুরুর পর থেকেই রিকশা চালানো বন্ধ। লকডাউন শিথিল হওয়ার পর মাঝে কয়েকদিন রিকশা নিয়ে বের হলেও প্যাসেঞ্জার পাননি। আসলে ট্রেনে যাতায়াত যাঁরা করেন, অশোকের রিকশার অধিকাংশ প্যাসেঞ্জার তাঁরাই। ট্রেন বন্ধ। ফলে রিকশা চড়ার লোকও রাস্তায় বিশেষ নেই।
সুপ্রিয়া বলল, ‘রাস্তায় এখন লোকজন কম বেরোন। ট্রেনও বন্ধ। কয়েকদিন এই প্রচণ্ড গরমে রিকশা নিয়ে বেরিয়েও বাবাকে ফিরতে হয়েছে ফাঁকা হাতে। তাই এখন আর যাচ্ছেন না। রিকশা নিয়ে বেরিয়ে গরমে শরীর খারাপ করে ফিরলে তো এখন আরও সমস্যা!’
তাহলে কীভাবে চলছে সুপ্রিয়াদের সংসার? বাংলার এই ভলিবলার বলছিলেন, ‘কী খাচ্ছি, তা আমরাই জানি! ফ্রি রেশন না পেলে পুরোপুরি না-খেয়েই থাকতে হত। কয়েকদিন এখানে ত্রাণ বিলি হয়েছিল। এখন তাও বন্ধ। আবার যদি কেউ ত্রাণ বিলি করেন, একটু সাহায্য করেন, সেই আশায় রয়েছি।’