28 C
Kolkata
Saturday, June 10, 2023
More

    বাবার কাজ নেই!‌ খেলা ছেড়ে দিতে হবে?‌‌ চিন্তায় তিন ভাই-‌বোন -‌ নির্মলকুমার সাহা

    গত বছর, ২০১৯ সালে উত্তরাখণ্ডে সাব জুনিয়র জাতীয় হ্যান্ডবল প্রতিযোগিতায় বাংলার হয়ে খেলেছে আনিশা পারভিন। বয়স ১৫-‌র একটু বেশি। ক্লাস টেনের ছাত্রী। দাদা সাগর আলিকে দেখেই তাঁর হ্যান্ডবল খেলার শুরু। আরও ভাল খেলোয়াড় হয়ে ওঠার লক্ষ্যে সুবিনয় ঠাকুরের কাছে প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করে। এর পর উত্তর ২৪ পরগনা জেলা দলের হয়ে ভালো খেলে বাংলার সাব জুনিয়র দলে সুযোগ করে নেয় অতি অল্প বয়সেই।

    ইবরান আলি। বয়স ১৬ বছর। দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। ফুটবল ওর প্রিয় খেলা। ছোটবেলায় খেলা শিখেছে সুখদেব মুখার্জির কাছে। বাড়ির কাছাকাছি সব মাঠে চুটিয়ে খেলার পর গত বছর কলকাতা ময়দানে এসেছে। সেখানে খেলা শুরু করে ভবানীপুরের অনূর্ধ্ব ১৫ দলের হয়ে। অনূর্ধ্ব ১৫ আই লিগেও ভবানীপুরের হয়ে খেলেছে এই মিডফিল্ডার। এখন লক্ষ্য ভারতের হয়ে খেলা।

    সাগর আলি। বয়স ২১ বছর। টাকার অভাবে দ্বাদশ শ্রেণির পড়াও শেষ করতে পারেনি। লেখাপড়া ছেড়ে দিতে হয়। লকডাউনের আগে, এই ২০২০-‌র গোড়ায় উত্তরপ্রদেশে সিনিয়র জাতীয় হ্যান্ডবল প্রতিযোগিতায় বাংলার হয়ে খেলে এসেছে। সিনিয়র জাতীয় হ্যান্ডবলে বাংলার হয়ে খেলাটা ওর কাছে নতুন নয়। সুবিনয় ঠাকুর ও অতনু মজুমদারের ছাত্র সাগর। বাংলার হয়ে সে জুনিয়র, সিনিয়র মিলিয়ে প্রায় একডজন জাতীয় আসরে খেলেছে।

    আনিশা, ইবরান ও সাগর এরা তিন ভাই-‌বোন। বাড়ি রাজারহাটের বসিনা গ্রামে। ওদের বাবা জিন্নাত আলি মালির কাজ করেন। বসিনা গ্রাম থেকে প্রতিদিন আসেন বাগুইআটি অঞ্চলে। ওখানে বিভিন্ন কমপ্লেক্সে থাকা ছোট ছোট ফুলের বাগানে কাজ করেন। অনেক বাড়ির ছাদেও রয়েছে ফুলের বাগান। দেখভাল করেন তারও। বড় ছেলে সাগরও লেখাপড়া ছেড়ে দেওয়ার পর বাবার সঙ্গে ওই কাজে আসে। গ্রামের বাড়ি থেকে নিয়মিত এলেও প্রতিদিন যে ঠিক মতো কাজ পান, তা নয়। স্ত্রী, তিন সন্তানকে নিয়ে পাঁচ জনের সংসার চালাতে তাই রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় জিন্নাত আলিকে।

    আর এখন?‌ করোনা-‌লকডাউনে আরও অনেকের মতো জিন্নাত আলিও এখন পুরোপুরি ‘‌বেকার’‌। একদিনও কাজে আসতে পারেননি। গ্রাম থেকে যাতায়াতের সমস্যা তো আছেই। তাছাড়া নিরাপত্তার কারণেই কমপ্লেক্সে, বাড়িতে ঢুকে ‌বাইরের লোককে কাজ করতে দেওয়ায় নিষেধাজ্ঞা।

    কাজ না থাকায় পরিবারের আয় বলে এখন আর কিছু নেই। ফলে সংসার আর চলছে না। প্রথম দিকে কিছু জায়গা থেকে ত্রাণ পাচ্ছিলেন। কতদিন আর কে ত্রাণ দেবে!‌ এখন আর ত্রাণ পাচ্ছেন না। ভরসা শুধু ফ্রি রেশন। এর মাঝেই আমফানে উড়ে যায় ঘরের টালির চাল। সরকারি অনুদানে নয়, ধারদেনার টাকায় সেটাকে কোনওভাবে মাথা গোঁজার মতো করে তুলেছেন। তাই তিন ভাইবোনেরই এখন দিন কাটছে চিন্তায়, শেষ পর্যন্ত অভাবের জন্য খেলাধুলো ছেড়ে দিতে হবে না তো!‌ ‌

    Related Posts

    Comments

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    সেরা পছন্দ

    হেডের দুরন্ত সেঞ্চুরি WTC প্রথম দিনেই চালকের আসনে অস্ট্রেলিয়া।

    দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : হেডের দুরন্ত সেঞ্চুরি প্রথম দিনেই চালকের আসনে অস্ট্রেলিয়া। ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে টসে জিতে রোহিত শর্মা ফিল্ডিং...

    কোচ হতে চলেছেন ‘কলকাতার মহারাজ’ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়

    দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : ১৪ ম্যাচে মাত্র পাঁচটি জয়। ১০ পয়েন্ট নিয়ে নয় নম্বরে শেষ করেছিল দিল্লি ক্যাপিটালস। তখনই দেওয়াল লিখন...

    ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহতদের শ্রদ্ধা নিবেদন ভারতীয় ক্রিকেট দলের ।

    দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল শুরু হওয়ার আগে ভারতীয় ক্রিকেট দল বালেশ্বরে হওয়া ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত ব্যাক্তিদের উদ্দেশে...

    অভিষেকের বিরুদ্ধে পোস্টার খোদ সিঙ্গুরেই ।

    দ্য কালকাটা মিরর ব্যুরো : এবার অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে পোস্টার পড়লো তৃণমূল কংগ্রেসের ভিত্তিভূমি খোদ সিঙ্গুরের । ' চোর ডাকাতের যুবরাজ নট...

    ১০০ দিনের কাজ নিয়ে কেন্দ্রকে তলব কোলকাতা হাইকোর্টের ।

    দ্য কালকাটা মিরর ব্যুরো : ১০০ দিনের কাজের টাকা নিয়ে কেন্দ্র রাজ্য তরজা লেগেই ছিলো । একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানির পর কোলকাতা...