দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: করোনা-লকডাউন, আবার কোথাও কোথাও আমফানের ধাক্কা। বাংলার নানা প্রান্তের একঝাঁক প্রতিশ্রুতিবান খেলোয়াড় গভীর আর্থিক সঙ্কটের মুখে। অনেকে বেঁচে আছে আধপেট খেয়ে। অনেকে প্রায় না খেয়ে। বেশ কয়েকজন এবারই উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছে। কলেজে ভর্তি হওয়ার টাকা নেই। ছেড়ে দিতে হচ্ছে লেখাপড়া। বেশ কয়েকদিন ধরে টানা এদের কঠিন লড়াই করে বেঁচে থাকার করুণ কাহিনি প্রকাশ করে চলেছি আমরা, দ্য ক্যালকাটা মিরর। ওই সব লেখা প্রকাশের পর বেশ সাড়াও পাওয়া গিয়েছে। কিছু দরদী মানুষ ওদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। ওদের হয়ে তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আমরা।
রেখা চক্রবর্তী (মজুমদার) বাংলার প্রাক্তন নামী অ্যাথলিট। করোনা পরিস্থিতির অনেক আগে থেকেই রেখা ও তাঁর স্বামী অ্যাথলেটিক্স কোচ দেবনারায়ণ মজুমদার পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত গ্রামের অ্যাথলিট পিঙ্কি হাঁসদার পাশে দাঁড়িয়েছেন। কলকাতায় ওঁদের বাড়িতে থেকেই খেলাধুলো ও লেখাপড়া করে পিঙ্কি। গ্রামের বাড়িতে গিয়ে পিঙ্কি লকডাউনে আটকে পড়েছে। এই আটকে পড়া মানে আবার আর্থিক সঙ্কট। গ্রামে পিঙ্কির যাতে কোনও সমস্যা না হয় সেদিকে আবার নতুন করে নজর দিতে হচ্ছে রেখা-দেবনারায়ণকে। পাশাপাশি অ্যাথলেটিক্সের আরও দুই প্রতিভা প্রিয়ঙ্কা হালদার ও অতনু রায়ের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন রেখা। মাসে ৫০০ টাকা করে টানা ৬ মাস ওদের দু’জনকে দেবেন। প্রথম মাসের টাকা ওরা পেয়ে গিয়েছে। রেখা জানিয়েছেন, পরের ৬ মাস আরও ২ জন অ্যাথলিটকে মাসে ৫০০ টাকা করে দেবেন।
কষ্টে থাকা প্রতিভাদের পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে এসেছেন প্রাক্তন অ্যাথলিট দেবাশিস সর্দারও। তিন অ্যাথলিট সাগর আচার্য্য, প্রিয়ঙ্কা হালদার, অতনু রায় ও কবাডি খেলোয়াড় দোয়েল মণ্ডলকে প্রাথমিকভাবে ৭০০ টাকা দিয়েছেন দেবাশিস। তিনি জানিয়েছেন, ওদের বাড়িতে খাদ্যদ্রব্যও পৌঁছে দেবেন। আরও কয়েকজনের পাশেও থাকবেন।
পরপর ২ বছর বাংলার হয়ে সাব জুনিয়র জাতীয় ফুটবলে (মীর ইকবাল ট্রফি) অংশ নেওয়া ও মোহনবাগানের অনূর্ধ্ব ১৫ দলের গোলকিপার প্রদীপ দাসের দুর্দশার কাহিনিও আমরা প্রকাশ করেছিলাম। প্রদীপের পাশে দাঁড়িয়েছেন সাব জুনিয়র বাংলা দলের কোচ অর্চিষ্মান বিশ্বাস, নীলাঞ্জন গুহ ও প্রশান্ত দে। ওঁরা তিনজন প্রদীপের বাড়ি গিয়ে নানান রকম খাদ্য সামগ্রী দিয়ে এসেছেন। প্রদীপ ফোনে বলল, ‘তিন স্যার আমার বাড়িতে এসেছিলেন। যা দিয়ে গেছেন মাস তিনেক আমাদের চলে যাবে। সঙ্গে দু-হাজার টাকাও দিয়েছেন। সাঁতারের সুরজিৎ স্যারও আমাকে সাহায্য করছেন।’
অ্যাথলিট শুক্লা বিশ্বাসকে নিয়ে লেখার শিরোনাম ছিল: ‘বাবার ভ্যান চালানো বন্ধ, কলেজে ভর্তি হতে পারছে না শুক্লা!’ ওই লেখা পড়ে সোনারপুর মহাবিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক শুভ্রাংশু রায় জানিয়েছিলেন, ‘ওকে আমাদের কলেজে ভর্তি হতে বলুন। ভর্তির টাকা আমি ব্যবস্থা করে দেব।’ আরও কিছু কলেজ ও বেসরকারি ইউনিভার্সিটি থেকেও ওকে ভর্তি নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছিল। অ্যাথলেটিক্স কোচ সুখেন মণ্ডলের উদ্যোগে শুক্লা ভর্তি হচ্ছেন রবীন্দ্র ভারতী ইউনিভার্সিটিতে। ওই লেখা প্রকাশের পরই প্রাক্তন ভারোত্তোলক ও পাওয়ারলিফটার সুমিতা লাহা জানিয়েছিলেন, শুক্লার কলেজে ভর্তির খরচ তিনি দিয়ে দেবেন। সুমিতাই দিচ্ছেন ভর্তির খরচ।
এছাড়া স্থানীয় অনেকেও আর্থিক সঙ্কটে থাকা ক্রীড়া প্রতিভাদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। দ্য ক্যালকাটা মিররের পক্ষ থেকে ওঁদের ধন্যবাদ।