খালসা ইংলিশ হাই স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র সবন জুহা। গত বছর, ২০১৯ সালে রোহতকে সাব জুনিয়র (অনূর্ধ্ব ১৫) জাতীয় বক্সিংয়ে ৭৫ কেজি বিভাগে বাংলার হয়ে ব্রোঞ্জ পদক জিতেছে। ওই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার আগে সাব জুনিয়র রাজ্য বক্সিংয়ে জিতেছিল সোনা। রাজ্য স্কুল বক্সিংয়েও ওই একই বিভাগে ওর গলায় উঠেছিল সোনার পদক। অংশ নিয়েছিল মিজোরামে জাতীয় স্কুল বক্সিংয়েও। সেখানে অবশ্য পদক জিততে পারেনি। করোনা-লকডাউনে বাংলার আরও অনেক ক্রীড়াপ্রতিভার মতো ভাল নেই সবনও। খেলাধুলো নেই। পেটে ঠিক মতো ভাতও নেই।
মোমিনপুরের ছেলে। কাছাকাছি আরও অনেককে দেখে একসময় ওর দাদা আলহান জুহা ভর্তি হয়েছিল একবালপুরের খিদিরপুর স্কুল অফ ফিজিক্যাল কালচারে বক্সিং শিখতে। দাদাকে দেখে একদিন ভাইও চলে গিয়েছিল ওখানে। সেই থেকে কোচ মেহরাজউদ্দিনের (চিনা) তত্ত্বাবধানে নিজেকে পরিণত করে তুলছে বক্সিংয়ে। ২০১৯ মোটামুটি ওর সাফল্যের বছর। তৈরি হচ্ছিল এবছর আরও অনেক সাফল্যের জন্য। কিন্তু সব পরিকল্পনাই আপাতত শিকেয়। বক্সিং রিংয়ে নয়, সবন এখন ঘরে বসে। দিনের পর দিন অসহায়ভাবে দেখতে হচ্ছে আর্থিক সঙ্কটের বিরুদ্ধে বাবার লড়াই।
একেবারে অস্বচ্ছল পরিবার থেকে খেলতে আসা ছেলে নয় সবন। ওর বাবা কামরান জুহা একটি বেসরকারি সংস্থায় অ্যাকাউন্টস বিভাগে চাকরি করতেন। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ওই সংস্থা বন্ধ। তারপরও কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী সুমিত কুমার চক্রবর্তীর চেম্বারে পার্ট টাইমের কাজ করছিলেন। টেনেটুনে সংসার চলে যাচ্ছিল। লকডাউন শুরু হতেই সেই কাজটিও অনিয়মিত হয়ে পড়ে। সংসারে আরও সঙ্কট নেমে আসে লকডাউনের মধ্যে ২৫ জুলাই। জীবনাবসান হয় ওই আইনজীবীর। সেই থেকে কামরান জুহা পুরোপুরি ‘বেকার’ হয়ে পড়েছেন।
কামরান বলছিলেন, ‘কী করব, বুঝে উঠতে পারছি না! সংসার চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ব্যাঙ্ক থেকে লোন নিয়েছিলাম। সেটাও শোধ করতে পারছি না। দিনদিন যা হাল হচ্ছে, ছেলের খেলা, লেখাপড়া বন্ধ করে দিতে না হয়! জানেন তো ভাল খেলতে গেলে ভাল ভাল খাবার দরকার। অন্য খরচও আছে। পেট ভরাতেই হিমশিম অবস্থা। কোথা থেকে ওকে ভাল খাবার দেব!’