২০১৭ সালে কেরলে জুনিয়র ন্যাশনাল ভলিবলে বাংলার মেয়েরা রানার্স হয়েছিল। সেই দলের সদস্য ছিল সুতপা মণ্ডল। তার আগের বছরও বাংলার হয়ে জুনিয়র ন্যাশনালে খেলেছে। ২০১৮ ও ২০১৯, পরপর দু’বছর বাংলার হয়ে খেলেছে ইউথ ন্যাশনালে। শেষবার বাংলা চ্যাম্পিয়ন। এবার ২০২০-র শুরুতে সিনিয়র জাতীয় প্রতিযোগিতায় বাংলা চতুর্থ স্থান পেয়েছে। ফেডারেশন কাপে পেয়েছে তৃতীয় স্থান। দু’টি প্রতিযোগিতাতেই বাংলার হয়ে খেলেছে সুতপা। আসামে খেলো ইন্ডিয়ায় রানার্স হওয়া বংলা দলেও ছিল। এসবের অনেক আগে মিনি ও সাব জুনিয়র জাতীয় প্রতিযোগিতায় একাধিকবার বাংলার প্রতিনিধিত্ব করেছে।
সুতপার মা প্রতিমা মণ্ডল স্বামী-পরিত্যক্তা। শুধু স্ত্রী কেন, মেয়ের খোঁজও রাখেন না শরৎ মণ্ডল। মেয়েকে নিয়ে প্রতিমা থাকেন বারাসতের শ্রীনগরে বাপের বাড়িতে। প্রতিমা আয়ার কাজ করেন। দারিদ্র্যে ভরা সংসার। তবু মেয়েকে প্রতিদিন পাঠান ভলিবল খেলতে। মেয়ে একদিন ভলিবল খেলে বড় হবে, চাকরি করবে, সংসারের হাল ফেরাবে এরকম স্বপ্নই দেখে আসছেন প্রতিমা। সেই স্বপ্নপূরণের জন্য মেয়ের লেখাপড়াও যাতে বন্ধ না হয়, সেদিকেও নজর দিয়ে এসেছেন প্রতিমা। সুতপা এখন অ্যাডামাস ইউনিভার্সিটির বি এ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। কিন্তু করোনা-লকডাউনে প্রতিমার সেই স্বপ্নটা এখন কঠিন বাস্তবের মুখে পড়ে ধাক্কা খাচ্ছে। এক আয়া সেন্টারের মাধ্যমে প্রতিমা কাজ করেন। লকডাউন শুরুর দিনই আয়া সেন্টার থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কাজ দেওয়া যাবে না। ফলে প্রতিমা এখন ‘বেকার’। কবে আবার কাজে ফিরতে পারবেন, জানেন না। বাপের বাড়ির অবস্থাও তথৈবচ। সংসার চালানো অসম্ভব হয়ে উঠেছে। এরপর আবার মেয়ের খেলাধুলো! চিন্তায় মা, মেয়ে দু’জনেই।
১১/১২ বছর বয়সে বারাসত নতুনপুকুর অ্যাসোসিয়েশনের কোর্টে কোচ স্বপন দাসের কাছে ভলিবল খেলা শুরু করেছিল সুতপা। মাঝে অন্য ক্লাবের হয়ে খেললেও আবার ফিরে এসেছে পুরনো ক্লাবে। এখন নিজের প্রিয় খেলা ভলিবলে আগের মতো মন দিতে পারছে না সুতপা। কী করে মন দেবে? এরকম আর কিছুদিন চললে তো খেলাই ছেড়ে দিতে হবে। পেটে ঠিক মতো খাবার না পড়লে খেলবে কী করে?