মামনি বিশ্বাস বাংলার মহিলা হকির অতি পরিচিত নাম। ওর বয়স যখন পাঁচ বছর, মা-বাবা আলাদা হয়ে যান। সেই থেকে দারিদ্র্যকে সঙ্গী করে মা-র কাছেই বড় হয়ে উঠেছে মামনি। সময়ের গতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সেই দারিদ্র্য বেড়েই চলেছে। করোনাকালে সেই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নিয়েছে। মেয়ে মামনিকে নিয়ে আলাদা থাকার সময় থেকেই শঙ্করী বিশ্বাস সংসার চালাতে তাঁতের কারখানায় কাজ শুরু করেন। ২ বছর আগে অসুস্থ হয়ে পড়ায় বেশ কিছুদিন কাজে যেতে পারেননি শঙ্করী। কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর কাজটা আর ফিরে পাননি। এখন ‘১০০ দিনের কাজ’ বাঁচিয়ে রেখেছে সংসার।
কৃষ্ণনগরের বিজেন্দ্রলাল কলেজের ফিজিক্যাল এডুকেশনের প্রথম বর্ষের ছাত্রী মামনি। এরই মধ্যে সাব জুনিয়র, জুনিয়র ও সিনিয়র মিলিয়ে ৮ বার জাতীয় হকিতে বাংলার প্রতিনিধিত্ব করেছে। প্রথম খেলেছিল ২০১৫ সালে রাঁচিতে সাব জুনিয়র ন্যাশনালে। ওই বছরই ছত্তিশগড়ে জুনিয়র জাতীয় হকিতেও বাংলা দলের হয়ে অংশ নেয়। পরের তিনটি জুনিয়র ন্যাশনালেও বাংলার হয়ে খেলেছে। ২০১৬ সালে রাঁচি, ২০১৭ ও ২০১৮ দু’বারই ভোপালে। সিনিয়র ন্যাশনালে খেলেছে পরপর তিনবার। ২০১৭ (হরিয়ানা), ২০১৮ (রাঁচি) ও ২০১৯ (হরিয়ানা) সালে। এছাড়া নানা প্রতিযোগিতায় খেলেছে নদীয়া জেলা দলের হয়ে। দিল্লিতে নেহরু কাপ হকিতেও কয়েকবার খেলেছে নদীয়ার হয়ে। মামনি খেলে সেন্টার হাফে। বলছিল, ‘দলের প্রয়োজনে গোলকিপার ছাড়া সব পজিশনেই খেলতে পারি। অনেক ম্যাচে অন্য পজিশনেও অনেকবার খেলেছি।’ মামনিদের বাড়ি কৃষ্ণনগরের ভাতজাংলার বসাক পাড়ায়। সেখান থেকে ১৫ মিনিট সাইকেল চালিয়ে প্রতিদিন অনুশীলনে আসে গভর্নমেন্ট কলেজের মাঠে। ওখানে প্রশিক্ষণ নেয় কোচ হিমাংশু ঘোষের কাছে।
মামনি বলছিল, ‘কিছু কিছু ব্যাপার বলে বোঝানো যায় না। আমরা ভীষণ খারাপ অবস্থায় আছি। আলুসেদ্ধ-ভাত খেয়ে চালানোর উপায়ও তো এখন নেই। আলুর যা দাম! ১০০ দিনের কাজে অসুস্থতার জন্য মা সবসময় যেতে পারেন না। মা যখন যেতে পারে না, আমি যাই। ওই কাজ করে যা টাকা পাওয়া যায়, তাতে কী সংসার চলে! মামারা কিছুটা সাহায্য করেন। তাই খাওয়া জুটছে।’ সংসারের দারিদ্র্য, অনেক সমস্যাতেও হকির প্রতি ওর ভালবাসা কমেনি। বলছিল, ‘এখন তো আর সামনে অন্য কোনও পথ নেই। সারাদিন মন খারাপ করে বাড়িতে বসে না থেকে হকি খেলেই একটু আনন্দ পেতে চাই। তাই মাঠে যাই।’