উত্তরপাড়া স্টেশন থেকে বালি খাল। এই রুটে অটো চালান উত্তম কুরি। ট্রেনের এক লাইন থেকে আরেক লাইনে যাওয়ার যাত্রীরাই বেশি ওঠেন ওই রুটের অটোয়। লোকাল ট্রেন বন্ধ সেই করোনা-লকডাউন শুরুর দিন থেকেই। বন্ধ উত্তমের অটোও। মাঝে অবশ্য তিন দিন বের হয়েছিলেন অটো নিয়ে। প্যাসেঞ্জার পাননি বললেই চলে। তাই আর বের হচ্ছেন না। এখন কোনও আয় নেই। ফলে সংসারের অবস্থা যতটা খারাপ হওয়ার তাই হয়েছে। সমস্যা শুধু সংসার চালানোয় নয়। ওঁর ছেলে প্রীতম কুরির জিমন্যাস্টিক্স চালানো নিয়েও গভীর চিন্তায় পড়েছেন উত্তম। একসময় ওঁর মেয়ে মৌ কুরি জিমন্যাস্টিক্স করত। ছেলে ও মেয়ে দু’জনের খেলার খরচ চালানোর সামর্থ্য না থাকায় মেয়েকে জিমন্যাস্টিক্স থেকে সরিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু আধপেটা খেয়ে ছেলে এখনও চালিয়ে যাচ্ছে। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে রাজস্থানের যোধপুরে সাব জুনিয়র জাতীয় জিমন্যাস্টিক্সে অনূর্ধ্ব ১০ বিভাগে জোড়া পদক জিতেছে প্রীতম। অল রাউন্ডে ব্রোঞ্জ, ভল্টে রুপো। তার আগে হাওড়ায় সাব জুনিয়র রাজ্য প্রতিযোগিতায়ও জিতেছিল জোড়া পদক, অল রাউন্ড ও ফ্লোরে। দু’টিই ব্রোঞ্জ। ভদ্রকালী হাই স্কুলের ক্লাস সিক্সের ছাত্র প্রীতম জিমন্যাস্টিক্স শিখছে ৪ বছর বয়স থেকে, উত্তরপাড়া সারথি ক্লাবে। ওখানকার উন্নত পরিকাঠামো শুধু প্রীতমকে নয়, অন্যদেরও এগিয়ে যেতে সাহায্য করছে। প্রীতম ওখানে প্রশিক্ষণ নেয় কোচ শুভম মুখার্জির কাছে। আর ওই ক্লাবের পুরো প্রশিক্ষণ পদ্ধতি দেখার দায়িত্বে আছেন অভিজ্ঞ কোচ জয়প্রকাশ চক্রবর্তী। প্রীতমের বাবা বলছিলেন, ‘সংসারে আগেও অভাব-অনটন ছিল। তবু টেনেটুনে চলে যেত। এখন তো কঠিন অবস্থা। কাজ না থাকলে ঘরে বসে কীভাবে সংসার চালাব! ট্রেন কবে থেকে আবার চলবে, জানি না। এখন খাবার জোটাতেই পারছি না। ছেলের খেলাধুলো আর কী করে চলবে! তবে ক্লাব থেকে ওকে টিফিন, খেলার সরঞ্জাম দেয়। ক্লাবের সবাই ওকে সাহায্য করছেন বলে এখনও চালিয়ে যাচ্ছে।’