পরপর দু’বার রাজ্য অ্যাথলেটিক্সে জ্যাভেলিন থ্রোতে সোনা জিতেছে। ২০১৮-য় অনূর্ধ্ব ১৬ বিভাগে। ২০১৯-এ অনূর্ধ্ব ১৮ বিভাগে। গতবছর রাজ্য স্কুল মিটেও গলায় উঠেছে জ্যাভেলিন থ্রোর সোনার পদক। ২০১৮-য় পাটনায় পূর্বাঞ্চল ও ২০১৯-এ পাঞ্জাবে জাতীয় স্কুল অ্যাথলেটিক্সেও অংশ নিয়েছে। এখন করোনা-লকডাউনের ধাক্কায় অ্যাথলেটিক্স ছেড়ে দিতে চাইছে ঊজ্জ্বলকুমার সিংহ। বাড়ির আর্থিক অবস্থা এতটাই খারাপ হয়েছে, যাতে ঊজ্জ্বল ওরকম ভাবতে বাধ্য হচ্ছে।
ঊজ্জ্বলদের বাড়ি উত্তর দিনাজপুরের ডালখোলা থানার গাংজানা গ্রামে। বাড়ি বলতে দরমা-পাট কাঠি-ভাঙা টিন-খরের দেওয়াল আর টিনের চালের ঘর। বাবা নিখিলচন্দ্র সিংহ দিনমজুর। তিনি কী কাজ করেন? প্রশ্ন করতেই ঊজ্জ্বলের জবাব, ‘কোনও ঠিক নেই। চাষের কাজই বেশি করেন। যখন ক্ষেতে কাজ থাকে না, ঘরামি বা অন্য কোনও কাজ খুঁজে নিতে হয়।’ কাজ থাকলে দৈনিক আয় ২০০ টাকার বেশি নয়। প্রত্যন্ত ওই গ্রামে দিনমজুরদের আয় এতটাই কম। আর নিজেদের না বলার মতো অল্প কিছু জমি আছে। ঊজ্জ্বল জানাল, এমনিতেই বছরে ৩৬৫ দিন তো আর কাজ পাওয়া যায় না। আর করোনা-আতঙ্ক, লকডাউনে তো তিন মাস ওর বাবার কাজই ছিল না। এখন আবার কাজ শুরু হয়েছে। তবে সমস্যা সেই একই, রোজ কাজ পাচ্ছেন না। ঠাকুমা, ঠাকুরদা, বাবা-মা, তিন ভাইকে নিয়ে ঊজ্জ্বলদের বেশ বড় সংসার। সেই সংসারের অবস্থা এখন শোচনীয়।
গ্রামের এবড়োখেবড়ো মাঠ আর উঁচু-নিচু রাস্তায় দৌড়তে দৌড়তেই ঊজ্জ্বলের অ্যাথলেটিক্সে চলে আসা। একসময় খোঁজ পেয়ে যায় রায়গঞ্জে ছেলেমেয়েদের অ্যাথলেটিক্স শেখানো হয়। ওদের গ্রাম থেকে রায়গঞ্জের দূরত্ব ৫০ কিলোমিটার। সপ্তাহে একদিন যেতে শুরু করে রায়গঞ্জে সূর্য সঙ্ঘ অ্যাথলেটিক ক্লাবে সজল দাসের কাছে কোচিং নিতে। সজল ওখানে কর্ণজোড়া হাউজিংয়ের মাঠে কোচিং করান। ঊজ্জ্বল বলছিল, ‘সপ্তাহে একদিনের বেশি সজলস্যারের কাছে যাওয়ার উপায় ছিল না। যাওয়া আর ফেরার বাস ভাড়া রোজ কোথায় পাব? আর এখন বাড়ির যা অবস্থা দাঁড়িয়েছে আর হয়ত রায়গঞ্জে যাওয়াই হবে না!’
মুখে ‘অ্যাথলেটিক্স হয়ত ছেড়ে দিতে হবে’ বললেও এখনই হাল ছাড়ছে না ঊজ্জ্বল। বাবার সঙ্গে দিনমজুরের কাজ করতে যাচ্ছে। দমদাম হাই স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র ঊজ্জল বলল, ‘রোজ কাজ পাচ্ছি না। মাঝেমাঝে পাচ্ছি। ভেবেছিলাম কাজ করে কিছু টাকা পেলে আবার রায়গঞ্জে যাওয়ার বাস ভাড়ার জন্য জমিয়ে রাখব। তা আর হচ্ছে না। পেট ভরাতে, সংসারের কাজেই লেগে যাচ্ছে!’

