নানা পেশার বহু মানুষ এখন আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত। ফলে বহু পরিবারের ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ গভীর সঙ্কটের মুখে। বাংলার খেলার মাঠ থেকে হারিয়ে যাওয়ার পথে একঝাঁক প্রতিভা। কেউ কেউ এখনও মুখে লড়াই চালানোর কথা বললেও, অনেকেই পরিস্কার জানিয়ে দিচ্ছে, খেলা ছেড়ে দেবে। এরকমই গভীর সমস্যার মুখে দাঁড়িয়ে স্বর্নেন্দু বাড়ুই। করোনা-লকডাউন শুরুর আগের মাসে, ফেব্রুয়ারিতে স্বর্নেন্দু লখনউয়ে কে ডি সিং বাবু সাব জুনিয়র (অনূর্ধ্ব ১৪) জাতীয় হকিতে বাংলার হয়ে খেলে এসেছে। শুধু তাই নয়, ওখানে ওই ছিল বাংলার অধিনায়ক। গত বছরও ওই প্রতিযোগিতায় বাংলার প্রতিনিধিত্ব করেছে।
স্বর্নেন্দুর বাবা সুমন বাড়ুই ক্যাব চালক। স্ত্রী, ছেলে, মেয়েকে নিয়ে সংসার মোটামুটি চলে যেত। চলে যেত ছেলের খেলাও। ফোনে সুমন বলছিলেন, ‘লকডাউন আর করোনার আতঙ্ক সব শেষ করে দিল! প্রথম মাস তিনেক তো গাড়ি নিয়ে বেরোতেই পারিনি। এখনও তো মাঝেমাঝে লকডাউন। তখন বাড়িতে বসেই থাকতে হচ্ছে। আর গাড়ি নিয়ে যেদিন বেরোচ্ছি, বুকিং পাওয়া যাচ্ছে না। ট্রেন চলছে না, আগের মতো লোক রাস্তায় বেরোচ্ছে না। কোথা থেকে প্যাসেঞ্জার পাব? একটা-দুটো ট্রিপ করেই বাড়ি ফিরে আসতে হচ্ছে।’
আরও অনেকের পরিবারের মতো স্বর্নেন্দুর বাবাও ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায়। বললেন, ‘খাওয়া-দাওয়ার খরচ জোটাতেই এখন হিমশিম অবস্থা। ছেলে-মেয়ের লেখাপড়া আছে। এরপর আবার কোথা থেকে ছেলের হকি খেলার খরচ চালাব?’
সুমন বাড়ুই ছোটবেলা থেকেই ক্রীড়াপ্রেমী। পাড়ায় ফুটবল খেলতেন। নানা কারণে নিজে বেশি দূর খেলাধুলো করতে পারেননি। কিন্তু ছেলে স্বর্নেন্দুকে নিজে হাত ধরে উল্টোডাঙার বাড়ি থেকে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করে দিয়েছিলেন এন্টালি হকি অ্যাকাডেমিতে। ওখানে অসীম গাঙ্গুলি, সুবীর পানদের কোচিংয়ে নিজেকে তৈরি করছে এই খুদে রাইট আউট। লকডাউনে অবশ্য ওখানে যাওয়াতেও ছেদ পড়েছে। হিন্দু স্কুলের ক্লাস এইটের ছাত্র স্বর্নেন্দু বলছিল, ‘বাড়িতে আর বসে থাকতে ইচ্ছে করছে না। কবে আবার মাঠে যেতে পারব!’
স্বর্নেন্দু মাঠে যাওয়ার অপেক্ষায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সুমন কি পারবেন ছেলের হকি খেলা চালাতে? এমনিতেই বাংলার হকির এখন করুণ অবস্থা। বাঙালি ছেলেরা আর হকি খেলতে চায় না। তারপর স্বর্নেন্দুর মতো প্রতিভারা কি হারিয়েই যাবে?