রাস্তার ধারে টিনের চালের ছোট্ট একটা চা-বিস্কুটের দোকান চালাতেন প্রতাপ ভান্ডারী। সেই দোকানের আয়েই চলত দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরের রায় পাড়ায় তাঁদের সংসার। প্রতাপের বাবা, মা, স্ত্রী, দুই সন্তানকে নিয়ে ৬ জনের সংসার মোটামুটি চলে যেত। কিন্তু এই করোনা-লকডাউনের মাঝেই ১৭ আগস্ট হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন প্রতাপ। অথৈ জলে পড়েছেন প্রতাপের স্ত্রী শুভ্রা। আর গভীর চিন্তায় পড়েছে প্রতাপের মেয়ে সদ্য ১৫-তে পা ফেলা অর্পিতা। ওর চিন্তার কারণ, এরপর খেলাধুলো কীভাবে চালাবে? নাকি ছেড়ে দিতে হবে?
অর্পিতা ভান্ডারী অ্যাথলেটিক্সে বাংলার এক উঠতি মুখ। ২০১৯-এ রাজ্য অ্যাথলেটিক্সে অনূর্ধ্ব ১৬ বিভাগে শটপুটে রুপো জিতেছে। রাজ্য মিটে সোনা হাতছাড়া হলেও রাঁচিতে পূর্বাঞ্চল অ্যাথলেটিক্সে ওই বিভাগে শটপুটের সোনা জেতে। অংশ নিয়েছে পাঞ্জাবে স্কুল ন্যাশনালেও। তার আগের বছর, ২০১৮-তে রাজ্য অ্যাথলেটিক্সে অনূর্ধ্ব ১৪ বিভাগে জিতেছিল শটপুটে সোনা। পদক সংখ্যা বাড়িয়েছিল হরিয়ানায় স্কুল ন্যাশনালে রুপো, পাটনায় পূর্বাঞ্চল অ্যাথলেটিক্সে ব্রোঞ্জ জিতে। ওর লক্ষ্য বাংলার হয়ে আরও অনেক পদক জিতে ভারতীয় দলে ঢোকা। কিন্ত হঠাৎ বাবার মৃত্যু ওর স্বপূরণের পথে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জয়নগরের বাড়ি থেকে মা-র সঙ্গে রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়ামে এ টি সি-তে নিয়মিত অনুশীলনে যাওয়া শুরু করেছিল কয়েকবছর আগে। লকডাউন শুরু থেকেই যা বন্ধ হয়ে যায়। প্রস্তুতি নিচ্ছিল লকডাউন শেষ হলেই আবার যেতে শুরু করবে ওখানে। জয়নগর ইন্সটিটিউশন ফর গার্লসের ক্লাস টেনের ছাত্রী অর্পিতা বলছিল, ‘সামনে এখন শুধুই অন্ধকার। কী হবে, বুঝতে পারছি না! আর ওখানে সলিল (চক্রবর্তী) স্যারের কাছে প্র্যাকটিস করতে যেতে পারব কিনা, জানি না! লকডাউনে বাবার দোকান টানা অনেকদিন বন্ধ ছিল। সংসার চলছিল অনেক কষ্টে। এখন সমস্যা আরও বেড়ে গেল।’
ওদের পরিবারের এখন বড় চিন্তা দোকানটা চলবে কী করে? অর্পিতা চিন্তায় আছে নিজের ও পাঁচবছরের ভাই অগ্নীশ্বরের লেখাপড়া নিয়েও। বাড়িতে মা, ভাই ছাড়াও আছেন ঠাকুরদা, ঠাকুমা। ঠাকুরদা মদনমোহন ভান্ডারী আবার দৃষ্টিহীন। দোকানটা কীভাবে চালানো যায়? এর কোনও উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না ওর মা শুভ্রা। সংসার চালাতে মা এবং খেলাধুলো ছেড়ে অর্পিতাকে চা-বিস্কুটের দোকানে এখন বসতে না হয়!