উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে লহন্ডা গ্রাম। ওই গ্রামের বঙ্কিম বিশ্বাস পরিযায়ী শ্রমিক। করোনা-লকডাউনের আগে ছিলেন হায়দরাবাদে। এক ঠিকাদারের দলের সঙ্গে কাজ করছিলেন ওখানে। তখনও করোনা-আতঙ্ক শুরু হয়নি। তার আগেই মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে হায়দরাবাদ থেকে এসেছিলেন গ্রামের বাড়িতে। প্রতিবার যেমন আসেন। ঠিক ছিল আবার এপ্রিলে চলে যাবেন। কিন্তু তারপর সময় গড়ায়, মার্চের পর আরও ৪ মাস কেটে যায়। কর্মহীন অবস্থায় বসে থাকতে হয় গ্রামের বাড়িতে। চেষ্টা করেছিলেন, যদি গ্রামের কাছাকাছি কোনও কাজ পাওয়া যায়। কিন্তু কোথায় কাজ পাবেন? পাওয়া সম্ভব ছিল না। সংসারে তখন দারিদ্র্য দিনের পর দিন বেড়েই চলে। আনলক চালু হওয়ার পর কিছুটা ঝুঁকি নিয়েই, অবশেষে ২ আগস্ট আবার সেই ঠিকাদারের ডাকে পাড়ি দিয়েছেন হায়দরাবাদ। গ্রামের বাড়িতে স্ত্রী, ছেলে-মেয়েরা এখন অপেক্ষায়, কবে তিনি টাকা পাঠাবেন। টাকা না আসা পর্যন্ত সংসার প্রায় অচল।
বঙ্কিম বিশ্বাসের মেয়ে ইতি অ্যাথলেটিক্স করে। উত্তর দিনাজপুরে বাড়ি হলেও গত বছর রাজ্য অ্যাথলেটিক্সে অংশ নিয়েছিল দক্ষিণ দিনাজপুরের হয়ে। অনূর্ধ্ব ১৮ বিভাগে ৮০০ মিটারে সোনা জিতেছিল। তার আগে ২০১৭ সালে রাজ্য স্কুল অ্যাথলেটিক্সে জিতেছিল রুপো। জেলা পর্যায়ে পরপর কয়েক বছর জিতেছে আরও কিছু পদক। কিন্তু এখন করোনাকালে ইতি আশঙ্কায় রয়েছে আর অ্যাথলেটিক্স করতে পারবে কিনা, তা নিয়েই। কর্ণজোড়ায় সজল দাসের কাছে ট্রেনিং নিতে যায় ইতি। গ্রামের বাড়ি থেকে অতটা দূরত্বে যেতে এখন সমস্যা। তাই কাছাকাছি দিদির বাড়িতে থেকে অনুশীলন চালাচ্ছে। ইতি বলছিল, ‘লকডাউনের জন্য অনেকদিন প্র্যাকটিস বন্ধ ছিল। এখন দিদির বাড়িতে থেকে প্র্যাকটিস করছি।’
রামপুর ইন্দিরা উচ্চ বিদ্যাপিঠের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী ইতি বিশ্বাস বলল, ‘এমনিতে আমাদের টানাটানির সংসার। বাবার টানা এতদিন কাজ না থাকায় সেই সমস্যা আরও অনেক বেড়েছে। বাড়ির অবস্থা এখন এতটাই খারাপ, আর অ্যাথলেটিক্স করতে পারব কিনা, জানি না! হয়ত ছেড়ে দিতে হবে। খেলাধুলো করার বাড়তি খরচ বাবা আর চালাতে পারবেন বলে মনে হয় না!’