২০১৫, ২০১৬, ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২০। পাঁচটি বয়সভিত্তিক জাতীয় ভলিবল প্রতিযোগিতায় বাংলার হয়ে খেলেছে। পাঁচটিতেই বাংলা চ্যাম্পিয়ন। শুধু তাই নয়, ২০১৮-তে থাইল্যান্ডে ইউথ এশিয়ান ভলিবল চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছে। ওখানেই খেলেছে প্রিন্সেস কাপ ভলিবলেও ভারতীয় যুব দলের হয়ে। ত্রিবেনীর সেই সাথী দাসের লড়াই এখন আর শুধু ভলিবল কোর্টে নয়, সংসারে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধেও।
মগরা ভলিবল অ্যাকাডেমিতে অল্প বয়সেই খেলা শুরু করেছিল সাথী। এখনও ওখানেই নিয়মিত ওর ভলিবলচর্চা কোচ প্রভাত ঘোষের কাছে। কলকাতা সুপার ডিভিশন ভলিবল লিগে সাথী টালিগঞ্জ সুভাষ সঙ্ঘ হয়ে গত মরসুমে ছিল রবীন্দ্র স্মৃতি সঙ্ঘের খেলোয়াড়। এবার আবার ফিরে যেতে পারে টালিগঞ্জ সুভাষ সঙ্ঘে। ২০১৫ ও ২০১৬, পরপর দু’বার বেঙ্গালুরু ও মধ্যপ্রদেশে মিনি ন্যাশনালে চ্যাম্পিয়ন বাংলার সদস্য। ২০১৮ ও ২০১৯, পরপর দু’বার রাজস্থান ও ওড়িশায় সাব জুনিয়র ন্যাশনালেও ছিল চ্যাম্পিয়ন বাংলা দলে। আর এবছর, ২০২০-তে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে অন্ধ্রপ্রদেশের রাজামপেটে জুনিয়র ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলা। সেই দলেও ছিল সাথী।
ত্রিবেনীর বাসুদেবপুরে সাথীদের বাড়ি। বাবা সিন্টু দাস, মা সুলেখা দাস। তিন বছর হল সিন্টুর সঙ্গে স্ত্রী সুলেখা ও মেয়ে সাথীর কোনও সম্পর্ক নেই। আলাদা থাকেন সিন্টু। স্ত্রী, মেয়ের কোনও খোঁজ রাখেন না। সংসার চালানোর, খেলার মাঠে মেয়ের স্বপ্নপূরণের জন্য পাশে থাকার সব দায়িত্ব তিন বছর ধরেই পুরোপুরি সুলেখার কাঁধে। এর জন্য তিনি বেছে নেন বিড়ি বাঁধার কাজ। অর্ডার নিয়ে বাড়িতে বসেই বিড়ি বাঁধেন। করোনা-লকডাউন শুরু হতেই সেই অর্ডার বন্ধ হয়ে যায়। কয়েকমাসের জন্য বেকার হয়ে যান। এখন আনলকেও কাজ প্রায় বন্ধ। আগের মতো আর অর্ডার পাচ্ছেন না। সুলেখা বলছিলেন, ‘কবে সব ঠিক হবে, জানি না। ভীষণ সমস্যার মধ্যে আছি। ফ্রি রেশনটাই এখন ভরসা। আর মেয়ের ভলিবল অ্যাকাডেমি থেকে কিছুটা সাহায্য। এভাবেই বেঁচে আছি!’
ত্রিবেনী গার্লস হাই স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী সাথী বলছিল, ‘দিন দিন চিন্তা বাড়ছে। কীভাবে লেখাপড়া, খেলাধুলোর খরচ মা চালাবেন, বুঝতে পারছি না। শেষ পর্যন্ত খেলা ছেড়ে দিতে না হয়!’
এভাবেই ভলিবল কোর্ট থেকে হারিয়ে যাবে না তো সাথী?