দুর্গাপুরের ইয়াসিন মিদ্যা একদা দোকানে কাজ করতেন। কয়েকবছর আগে লোন নিয়ে বাড়ির সামনে একটি ছোট দোকান খুলে ফেলেন। গ্রিল তৈরি করে বিক্রি করা। মোটামুটি সংসার চলে যাচ্ছিল। করোনাকালে সেই গ্রিল কারখানা বা দোকান এখন অচল। বন্ধ করে রেখেছেন। মানুষের খাওয়াই জুটছে না, গ্রিলের দরকার থাকলেও কিনতে পারছেন না। ফলে সংসার চালানো, লোন শোধ করা— কঠিন হয়ে উঠেছে।
ইয়াসিনের ছেলে রাহুল মিদ্যা বাস্কেটবলে এরই মধ্যে বেশ নাম করেছে। সমস্যায় পড়েছে রাহুলও। বাস্কেটবলে এগিয়ে যাওয়ার সময় ওর যা যা প্রয়োজন, বাবার পক্ষে তা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ২০১৯ সালে কোয়েম্বাটোরে ইউথ ন্যাশনাল বাস্কেটবলে বাংলার অধিনায়ক ছিল রাহুল। তার আগে আরও একবার ইউথ ন্যাশনালে বাংলার হয়ে খেলেছে। ২০১৮ সালে উদয়পুরে। ওই বছরই দিল্লিতে স্কুল ন্যাশনালে বাংলার প্রতিনিধিত্ব করেছে। সাব জুনিয়র জাতীয় বাস্কেটবল প্রতিযোগিতায় বাংলার হয়ে খেলেছে আরও ২ বছর আগে, ২০১৬ সালে হায়দরাবাদে। ছোটবেলায় দুর্গাপুরের তানসেন অ্যাথলেটিক ক্লাবে বাস্কেটবল খেলা শুরু করেছিল রাহুল। রাজ্য বাস্কেটবলে খেলা শুরু বর্ধমান জেলা দলের হয়ে। পরে কলকাতায় খেলতে আসার পর নজরে পড়ে যায় সুব্রত দাসের (বাপ্পা)। তাঁর উদ্যোগেই নিউ আলিপুর রেড স্টারস অ্যাসোসিয়েশনে যোগ দেয়। বিজড়া হাই স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র রাহুল এখন আবার খেলছে বর্ধমান জেলা দলের হয়েই। কিন্তু করোনা-প্রভাবে ওর খেলাটাই প্রশ্ন চিহ্নের সামনে দাঁড়িয়ে।
রাহুল বলছিল, ‘বাবার এখন সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে। তারপর লোন শোধের ব্যাপারটা আছে। আর টানতে পারছেন না। এরপর আমার খেলার জন্য কী করে টাকা দেবেন? চিন্তায় আছি।’ এরপর ওর সংযোজন, ‘খেলার জন্য বাপ্পাদা নানাভাবে আমাকে সাহায্য করেছেন। এখনও করেন।’
বাংলার অজস্র ক্রীড়াপ্রতিভা করোনা-লকডাউন-আনলকের জেরে এখন গভীর সঙ্কটে। তাদেরই একজন দুর্গাপুরের রাহুল মিদ্যা। চারিদিকে একই প্রশ্ন, এদের জন্য সরকার, ক্রীড়া সংস্থা কেন উদ্যোগ নেবে না?