কৈলাশ বোস স্ট্রিটে একটি গুমটির মধ্যে চা-বিস্কুটের দোকান চালান শ্যামল চন্দ। সেই ব্যবসা এখন শিকেয় উঠেছে। কয়েকমাস বন্ধ ছিল। এখন মাঝেমধ্যে খুললেও খদ্দের নেই বললেই চলে। শ্যামলের স্ত্রী দীপিকা মিড ডে মিলের রান্নার কাজ করতেন। সে তো প্রায় ৬ মাস বন্ধ। ফলে শ্যামল-দীপিকাদের সংসারে আয় এখন নেই বললেই চলে।
শ্যামল-দীপিকার ছেলে অনিকেত চন্দ। শ্যামবাজার এ ভি স্কুলের ক্লাস ইলেভেনের ছাত্র। খেলাধুলো করে। ট্রায়াথলন ও অ্যাকুয়াথলনে রাজ্য ও জাতীয় প্রতিযোগিতায় বেশ কয়েকবার অংশ নিয়েছে। রাজ্য প্রতিযোগিতায় পদকও জিতেছে। সংসার চালানোর পাশাপাশি ছেলের খেলার খরচ আছে। আর আছে অনিকেতের চিকিৎসার খরচ। অনিকেত স্নায়ুর রোগে আক্রান্ত। মাঝেমধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়ে।
সংসারের আর্থিক সমস্যার মধ্যেও ছেলেকে কখনও খেলাধুলো বন্ধ করার কথা মা-বাবা বলেননি। ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলোকে জীবনের অঙ্গ করে নিয়েছে অনিকেত। সাঁতার কাটতে যেত বাড়ির কাছাকাছি বিদ্যাসাগর সুইমিং ক্লাবে। সাইকেল চালাতে পটু। টানা দৌড়তেও ভালবাসে। সাইক্লিং, রানিং ও সুইমিং মিলিয়েই ট্রায়াথলন। আর অ্যাকুয়াথলন হল সাঁতার ও দৌড়। বিদ্যাসাগর সুইমিং পুলেই অনিকেতকে প্রথম দেখেন কোচ রাজদীপ মণ্ডল। তিনিই ওকে নিয়ে আসেন ট্রায়াথলনে। সেই থেকে ট্রায়াথলনের অনুশীলনে ওর ঘাটতি নেই। দৌড়ের জন্য ময়দানে ইস্টার্ন রেলের মাঠে, সাঁতার কাটতে বিদ্যাসাগর সুইমিং পুলে, আর সাইক্লিংয়ের জন্য ময়দানে রেড রোড বা ইস্টবেঙ্গল তাঁবুর সামনের রাস্তা, কিংবা কখনও নিউটাউনে চলে যায় কোচের সঙ্গে। এছাড়া শীতকালে ওদের ক্যাম্প হয় টালায়।
অনিকেত কয়েক বছর ধরেই সাফল্যের মধ্যে রয়েছে। ২০১৮ রাজ্য গেমসে ট্রায়াথলনে দ্বিতীয় হয়। ২০১৯-এ রাজ্য চ্যাম্পিয়নশিপে এবং এবছর রাজ্য গেমসে তৃতীয় হয়েছে। ২০১৭ সালে পুনেয় জাতীয় বয়সভিত্তিক অ্যাকুয়াথলনে প্রথম বাংলার প্রতিনিধিত্ব করে। পেয়েছিল চতুর্থ স্থান। ২০১৮-য় বিশাখাপত্তনমে সিনিয়র ন্যাশনাল ট্রায়াথলনেও অংশ নিয়েছে। ২০১৯ সালে কলকাতায় ওপেন অ্যাকুয়াথলন ন্যাশনালেও বাংলা দলে ছিল।
ট্রায়াথলনে অনিকেত এক ঊজ্জ্বল প্রতিভা। কিন্তু শুধু মাত্র দারিদ্র্যের জন্যই কি হারিয়ে যাবে? কোচ রাজদীপ মণ্ডলের কথাবার্তায়ও সেই আশঙ্কা। তিনি বলছিলেন, ‘খেলাধুলোর প্রতি ছেলেটা খুব আন্তরিক। কিন্তু পরিবারের অবস্থা এখন ভীষণ খারাপ। জানি না, এভাবে কতদিন চালাতে পারবে!’ একই আশঙ্কায় আছেন অনিকেতের মা। বললেন, ‘এখন সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে। খেলাধুলো কীভাবে করবে, বুঝতে পারছি না!’