টেবিল টেনিসের শহর শিলিগুড়িতে করোনা-আতঙ্কের ধাক্কা কাটিয়ে এখনও কচিকাঁচারা বোর্ডের সামনে আগের মতো দাপাদাপি শুরু করতে পারেনি। তবে বড়রা বিধি মেনে অনুশীলন শুরু করে দিয়েছেন। দু’বারের সিনিয়র জাতীয় চ্যাম্পিয়ন, অর্জুন মান্তু ঘোষ প্র্যাকটিস করান ওয়াই এম এ-তে। করোনাকালে অনেকদিন বন্ধ থাকার পর ওখানেও শুরু হয়েছে অনুশীলন। মান্তু জানালেন, ‘বড়দের কয়েকজনকে নিয়েই আপাতত শুরু করেছি। সব নিয়ম মেনে, সতর্কতা বজায় রেখেই প্র্যাকটিস করাচ্ছি। ছোটদের এখনও আসতে দিচ্ছি না। বাচ্চারা অত নিয়ম মেনে চলতে পারবে না। ওদের কাছে ব্যাপারটা কঠিন। তাই ঝুঁকি নিচ্ছি না।’


করোনায় খেলাধুলোর অনেক ক্ষতি হয়ে গেল, মনে করেন মান্তু। বলছিলেন, ‘শুধু তো টেবিল টেনিস নয়, সব খেলার একই অবস্থা। বিশেষ করে এজ গ্রুপের প্লেয়ারদের। একটা বছর নষ্ট হওয়া মানে, সেই এজ ক্যাটাগরিতে খেলার আর সুযোগই অনেকে পাবে না। ওই ছেলেমেয়েগুলোর জন্য ভীষণ খারাপ লাগছে। নিজে খেলোয়াড় হয়ে জানি, একটা বড় টুর্নামেন্টের প্রস্তুতির জন্য কতটা পরিশ্রম করতে হয়। সেই পরিশ্রম অনেকের কাছে বৃথা হয়ে গেল।’ প্র্যাকটিস শুরু করালেও জানেন না, কবে কোন প্রতিযোগিতা হবে। মান্তু বললেন, ‘বুঝতে পারছি না এবছর কোনও প্রতিযোগিতা আদৌ আর হবে কিনা।’
এই অনিশ্চয়তার মধ্যেই এগিয়ে চলেছে মান্তুর নিজের টেবিল টেনিস অ্যাকাডেমির কাজ। শ্বশুর বাড়ির পাড়াতেই (বাবুপাড়া) স্বামী প্রাক্তন টেবিল টেনিস খেলোয়াড় ও কোচ সুব্রত রায় আর মান্তু মিলে গড়ে তুলছেন টেবিল টেনিস অ্যাকাডেমি। মান্তু জানালেন, অফিস (অয়েল ইন্ডিয়া) থেকে লোন নিয়েই বাড়ি তৈরি করছেন। করোনার জন্য গতি কিছুটা কমে গেলেও কাজ প্রায় শেষ। নতুন বছরের শুরুতেই চালু হয়ে যাবে অ্যাকাডেমি। আপাতত ৭/৮ টি টেবিল থাকবে। কোচিংয়ের দায়িত্বে থাকবেন মান্তু আর সুব্রতই। জানালেন, এর বাইরেও কয়েকজন সহযোগী কোচ, ফিজিক্যাল ট্রেনার থাকবেন। শুরুতে স্থানীয় ছেলেমেয়েরাই ওখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবে। যাতে বাড়ি থেকে যাতায়াত করতে পারে। বাইরের ছেলেমেয়েদের জন্য পরে হস্টেলের ব্যবস্থা করবেন।
করোনাকালে নিজে কীভাবে সময় কাটাচ্ছেন? ওঁদের পরিবারে এখন শুধু গান আর গান। সুব্রত রায়ের গান তো এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। মাঝে একদিন দেখা গেল সুব্রত-মান্তুর ডুয়েট। বাদ নেই ওঁদের পুত্র সিদ্ধার্থও। মান্তু বললেন, ‘আমাদের ফ্যামিলিতে গান সবারই পছন্দ। আগে টেবিল টেনিসেই সময় চলে যেত। গানের জন্য আলাদা সময় বের করা যেত না। এখন সেই সময় পাওয়া যাচ্ছে। আর আমার ছেলের তো গান, নাচ খুব প্রিয়।’ তাই বলে সিদ্ধার্থর টেবিল টেনিস অপছন্দ নয়। এখন বন্ধ থাকলেও টেবিল টেনিস খেলতেও যায়। মা-বাবার খেলা টেবিল টেনিসেও সিদ্ধার্থর যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে। মান্তু বললেন, ‘কোনও কিছু চাপিয়ে দিতে চাই না। ওর যেটা ভাল লাগে, সেটাই করুক। এখন বয়স কম, সময় মতো কোনও একটা নিশ্চয়ই বেছে নেবে।’
১৬ সেপ্টেম্বর, বুধবার মান্তু-সুব্রতর ছেলে সিদ্ধার্থর জন্মদিন। ৯-য় পূর্ণ করে ১০-এ পা দেবে। সেদিন বাবার কাছ থেকে সিদ্ধার্থ বিশেষ উপহার পাচ্ছে। সুব্রতর গানের প্রথম ভিডিও অ্যালবাম প্রকাশিত হবে সেদিন। ৬ মিনিটের ভিডিওতে সুব্রতর গানটির বিষয় ছেলের জন্মদিন।