এন এফ রেলের চাকরি। এখন পোস্টিং আলিপুরদুয়ার জংশনে, ডি আর এম অফিসে। ফলে জলপাইগুড়ির বাড়ি ছেড়ে অফিস করার জন্য থাকছেন আলিপুরদুয়ারেই। মাস দেড়েক আগে ওখানে বাড়ি ভাড়া নিয়েছেন। অফিসের শেষে বিকেলে ডুয়ার্স কর্নারের মাঠে হালকা অনুশীলনও সেরে নিচ্ছেন স্বপ্না বর্মন। এশিয়ান গেমসে সোনাজয়ী অ্যাথলিট স্বপ্না ফোনে বলছিলেন, ‘বর্ষায় চারদিকেই মাঠে কাঁদা। বড় বড় ঘাস। কোথায় দৌড়ব? তাছাড়া করোনার আতঙ্কও তো আছে। নিজের এবং অন্যদের, সবার স্বার্থেই বেশি ভিড়ের মধ্যে যেতে চাইছি না। ডুয়ার্স কর্নারের মাঠে যাচ্ছি। নিজেকে ফিট রাখার জন্য কিছুটা ফিজিক্যাল ট্রেনিং করছি। জলপাইগুড়ি থেকে এখানে আসার আগেও তো কয়েকমাস নষ্ট হয়েছে। তখন করোনা-আতঙ্কটা আরও ভয়াবহ ছিল। অনেকদিন লকডাউনও ছিল। বাড়ি থেকে মাঠে গিয়ে প্র্যাকটিস করার উপায় ছিল না। বাড়ির মধ্যেই ফিজিক্যাল ট্রেনিং করেছি।’


এবছর টোকিও অলিম্পিক না হওয়ার প্রসঙ্গ উঠতেই কোচ সুভাষ সরকারের ছাত্রী বললেন, ‘শুধু আমার একার নয়, সারা বিশ্বে অনেকেরই তো প্রস্তুতি জলে গেল। আমি অলিম্পিকের দলে ঢুকেই যেতাম, এটা এখন আর জোর দিয়ে বলা বা না-বলার কোনও মানে নেই। তবে এটা ঘটনা, কোয়ালিফাই করার জন্য আমি খুব ভালভাবেই তৈরি হচ্ছিলাম। সেই প্রিপারেশনটা কোনও কাজে লাগাতে পারলাম না। অলিম্পিক একবছর পিছিয়ে যাওয়ায় সবাইকেই আবার নতুন করে শুরু করতে হবে। আমাকেও তাই করতে হবে। সামনের বছরও অলিম্পিক হবে কিনা, সেটাও এখনও নিশ্চিত নয়। যদি চার বছর পিছিয়ে যায়, তাহলে অনেকেরই বিশাল ক্ষতি হয়ে যাবে। অলিম্পিকটা হয়ত অনেকের কাছেই সারাজীবনের জন্য স্বপ্নই থেকে যাবে। অনেকের বয়স বেড়ে যাবে। ফর্ম ধরে রাখা কঠিন হয়ে যাবে।’
কথার মাঝে বারবার কলকাতার খবর নিচ্ছিলেন স্বপ্না। বললেন, ‘কবে আবার সাইয়ে ফিরে যাব, পুরোপুরি অনুশীলন শুরু করব, বুঝতে পারছি না। আসলে আমাদের প্র্যাকটিস শুরু করতে না পারার চেয়েও বড় সমস্যা এখন মানুষের জীবন। ৬ মাস ধরে শুধু মানুষের মৃত্যুর খবর শুনতে শুনতে সত্যি আর ভাল লাগছে না! কবে এটা থামবে, কে জানে।’
ছোটবেলায় বাড়িতে, একটু বড় হয়ে সাই হস্টেলে। আর এখন চাকরিসূত্রে একা আলিপুরদুয়ারে ভাড়া বাড়িতে। কেমন কাটছে এই জীবন? স্বপ্না বললেন, ‘অফিস আর প্র্যাকটিসে অনেকটা সময় চলে যাচ্ছে। ব্রেকফাস্ট, দুপুরের খাবার নিজেই তৈরি করে নিচ্ছি। রাতে মাঝেমধ্যে হোম সার্ভিস নিচ্ছি। কখনও আবার নিজে তৈরি করছি। এছাড়া সঙ্গী হিসেবে গান তো আছেই। চলে যাচ্ছে।’