বছর ঘুরতে চলল। গত নভেম্বরে যোগ দিয়েছিলেন পাতিয়ালায় জাতীয় শিবিরে। ডিসেম্বরের শুরুতে কয়েকদিনের জন্য গিয়েছিলেন নেপালে সাউথ এশিয়ান গেমসে। সেখান থেকে ফিরেই আবার পাতিয়ালা। অলিম্পিক ইয়ারে পরপর ছিল কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতা। জাতীয় শিবিরে আরও অনেকের সঙ্গে তারই প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন হিমাশ্রী রায়। হঠাৎ করোনার আগমনে সব হিসেব লণ্ডভণ্ড। সব প্রতিযোগিতা বাতিল। কিছুদিন অপেক্ষার পর একবছর পিছিয়ে দেওয়া হল অলিম্পিকও। হিমশ্রীরা আটকে থাকলেন পাতিয়ালাতেই। এখনও সেখানেই। বৃহস্পতিবার ফোনে পাতিয়ালা থেকে হিমাশ্রী বলছিলেন, ‘প্রথম দিকে লকডাউনের সময় হস্টেলের ঘরে পুরোপুরি বন্দি ছিলাম। বোরিং! সেই বিরক্তিকর সময় অবশ্য কাটিয়ে এসেছি। এখন আনলক সময়ে কিছুটা ছার পাওয়া যাচ্ছে। একবেলা মাঠে নামতে পারছি। তবে একসঙ্গে সবাই যেতে পারছি না। গ্রুপে গ্রুপে ভাগ হয়ে যেতে হচ্ছে। মাঠেও সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং মানতে হচ্ছে।’ হিমাশ্রী জানালেন, হস্টেলে পুরোপুরি বন্দি থাকার সময় দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতো ঘরের ভেতরেই কিংবা কখনও হস্টেলের ফুলের বাগানে ফিজিক্যাল ট্রেনিং সেরে নিতেন।


একবেলা অনুশীলন, হস্টেলের বাইরে যাওয়া নিষেধ, হস্টেলের ভেতরেও কোনও জটলা বা একসঙ্গে আড্ডা বন্ধ। তাহলে কীভাবে সময় কাটছে? হিমাশ্রী বললেন, ‘ছোটবেলা থেকেই গল্পের বই পড়তে খুব ভালবাসি। খেলাধুলো নিয়ে মেতে থাকায় বই পড়ার সময় বের করা কঠিন হয়ে গিয়েছিল। আমার দুই প্রিয় লেখক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আর শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। এখন অনেক সময়। রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্রের লেখা পড়ছি। মোবাইলে দীপিকা পাড়ুকোন, অক্ষয় কুমার, আমির খানের ফিল্মও দেখছি। গান শুনছি। আর ছবি তুলতে আমার খুব ভাল লাগে। বাইরে বের হতে পারছি না। হস্টেলের বাগানেই ছবি তুলছি। আসলে এসবই নিজেকে মানসিক দিক দিয়ে হালকা রাখতে সাহায্য করছে। সব মিলিয়ে সময় কেটে যাচ্ছে।’


জলপাইগুড়ির ধূপগুড়ির বাড়িতে শেষ কবে গিয়েছেন, তা প্রায় ভুলেই গিয়েছেন। হিমাশ্রী বললেন, ‘বাড়ির সবার সঙ্গে এখন যোগাযোগ শুধু ফোনেই। রোজই ফোনে কথা হয়। আত্মীয়দের, পাড়ার সবার খবর নিই মা-বাবার কাছ থেকে। কখনও কখনও মনটা ভীষণ খারাপও হয়ে যায়। আমরা তো এখানে বেশ ভালই আছি। করোনার ধাক্কায় কত মানুষের কাজ চলে গেছে। অনেকে আমার পরিচিত। অনেকে অপরিচিতও। কিন্তু মানুষের ওই দুর্দশার কথা শুনলে মনটা সত্যি ভীষণ খারাপ হয়ে যায়। কবে মানুষ এই দুর্দশা থেকে মুক্তি পাবে, কে জানে!’