দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: অ্যাং রিটা শেরপা একজন বিশিষ্ট নেপালী পর্বতারোহী, যিনি বিশ্বের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে বোতলজাত অক্সিজেন ছাড়াই ১০ বার মাউন্ট এভারেস্টে আরোহণ করেছেন। গতকাল তিনি ৭২ বছর বয়সে নিজ বাসগৃহে প্রয়াত হয়েছেন।
অ্যাং রিটা শেরপা, জনপ্রিয়ভাবে তুষার চিতা (স্নো লেপার্ড) নামে পরিচিত। তিনি সর্ব প্রথম ১৯৮৩সালে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু পর্বত চূড়ায় পৌঁছান। সাথে ছিল না কোনো অক্সিজেন সিলিন্ডার।


তাঁর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে সোমবার রাজধানী কাঠমান্ডুতে তিনি প্রয়াত হয়েছেন। এই প্রবীণ পর্বতারোহীর মস্তিষ্ক এবং লিভারের অসুখ ছিল। তাঁর এই মৃত্যু নেপাল এবং তাঁর নিজের পর্বত আরোহণ সম্প্রদায়ের জন্য একটি বড় ক্ষতি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
২০১৭ সালে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস বিশ্বের একমাত্র ব্যক্তি হিসেবে আং রিটাকে স্বীকৃতি দেয়, যিনি ১৯৮৩ থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যে বোতলজাত অক্সিজেন ছাড়াই ১০ বার মাউন্ট এভারেস্টে আরোহণ করেছেন। সেই রেকর্ড এখনো কেউ ভাঙতে পারেনি।


শুধু তাই নয়, তিনিই প্রথম ব্যাক্তি যিনি ১৯৮৭ সালে সম্পূরক অক্সিজেন ছাড়াই ৮,৮৪৮মিটার (২৯,০২৮ফুট) উঁচু পর্বতের শিখরে প্রথম শীতকালীন আরোহণ অর্জন করেন। আরোহণে তাঁর এই দক্ষতা তাকে স্নো লেপার্ড ডাকনাম অর্জনে সহায়তা করে।
শুধু পর্বতরোহণ নয়, সংযমী ও পর্বত প্রেমিক আং রিটা হিমালয়ের পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য সংরক্ষণ প্রকল্পে কাজ করেছেন। সোমবার তার মৃত্যুর সংবাদের পর সহকর্মী পর্বতারোহীরা তাকে শ্রদ্ধা জানায়।
নেপালের প্রবীণ পর্বতারোহী এবং নেপাল মাউন্টেনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি আং তেশেরিং শেরপা এক বিবৃতিতে বলেন, “তিনি পর্বতের ওপরে তুষার চিতাবাঘের মতই সক্রিয় ছিলেন এবং তাঁকে ট্রুপে পাওয়া অনন্য সৌভাগ্য’র ব্যাপার ছিল। এজন্যই পর্বতারোহী ভ্রাতৃদ্বয় তাঁকে এই (স্নো লেপার্ডের) উপাধি প্রদান করার সিদ্ধান্ত নেয়।
পর্বতারোহীরা বলেন যে আং রিটা পর্বতারোহীদের জন্য একটি অনুপ্রেরণা এবং নেপালের আরোহণ প্রশিক্ষণ কোর্স ও তার অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা থেকেই অঙ্কিত হয়েছে।
এনএমএ-এর বর্তমান প্রেসিডেন্ট সান্তা বীর লামা জানান , “আমাদের পর্বত পর্যটন তার কাছে ঋণী। নেপালের পর্যটন বিভাগ বলেছে যে পর্বতারোহণে তাঁর অবদান “সবসময় স্মরণ করা হবে”।
তিব্বতী ঐতিহ্য মতে শেরপা সম্প্রদায় একটি জাতিগত গোষ্ঠী বা হিমালয় অঞ্চলের আদিবাসী। কিন্তু নেপালের বাইরে এদের পেশার কারণে অনেকের কাছে “শেরপা” শব্দটি মাউন্টেন গাইড হিসেবে কাজ করা ব্যক্তিদের কাছে সমার্থক হয়ে উঠেছে। তাঁর মৃতদেহ কাঠমান্ডুর একটি মঠে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং এই সপ্তাহের শেষের দিকে তাকে কবর দেওয়া হবে।


আজ হাজার হাজার মানুষ মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় উঠেছে আর উঠছেও, কিন্তু অক্সিজেন ছাড়া সেই চূড়াতে ওঠা সত্যিই বিরল। সংযম ও পর্বতের প্রতি ভালোবাসা না থাকলে আং রিটা হয়ে ওঠা সম্ভব নয়।