ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকার নেশা। আর অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল গিটার বাজানো শেখা। এবছর জানুয়ারি মাসেই কিনে ফেলেছিলেন গিটার। শিখতেও শুরু করেছিলেন। কিন্তু সেভাবে সময় বের করতে পারছিলেন না। সেই সুযোগ করে দিয়েছে করোনা-আতঙ্ক। এপ্রিল মাসেই জিব্রাল্টার পার হতে যাওয়ার কথা ছিল। তারপর অক্টোবরে আয়ারল্যান্ডের নর্থ চ্যানেল। কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তারিখও পেয়ে গিয়েছিলেন। ফলে জলেই বেশি সময় দিতে হচ্ছিল। যখন জিব্রাল্টার পার হতে যাওয়ার শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখনই বিশ্ব জুড়ে শুরু হয় করোনা-আতঙ্ক। মার্চের শেষ দিকে ভারতেও শুরু হয়ে যায় লকডাউন। অনুশীলন বন্ধ। অফিসে যাওয়া নেই। বাড়িতে বসে ছবি আঁকা আর গিটার নিয়েই মেতে থাকতে শুরু করেন।
ইংলিশ চ্যানেলজয়ী সাঁতারু তাহরিনা নাসরিন বলছিলেন, ‘লকডাউনের শুরুতেই তো বাতিল হয়ে যায় জিব্রাল্টার যাওয়া। তখনও আশায় ছিলাম, পরিস্থিতি নর্ম্যাল হবে। হয়ত অক্টোবরে নর্থ চ্যানেল পার হতে যেতে পারব। পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকায় সেটাও আর হল না!’ লকডাউন শুরু হওয়া থেকেই জলে নামতে পারছিলেন না তাহরিনা। আনলক পর্বে দিন-দুয়েক উলুবেড়িয়ার গঙ্গায় সাঁতার কাটতে নেমেছিলেন। কিন্তু জল বেশি নোংরা। ফলে আর যাচ্ছেন না।
তাহরিনা বলছিলেন, ‘যেভাবে ভাইরাস ছড়াচ্ছে, ঝুঁকি নিইনি, এখনও নিচ্ছি না। তাই গঙ্গা, সুইমিং পুল থেকে দূরেই আছি। কবে জলে নামতে পারব, জানি না। আবার নিজেকে পুরো ফিট করে তুলতে অনেক সময় লাগবে।’ জিব্রাল্টার এবং নর্থ চ্যানেল, দুই কর্তৃপক্ষই জানিয়ে দিয়েছেন সামনের বছর তাহরিনাকে তারিখ দেওয়া হবে। সামনের বছরও যদি পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয়, তাহলে ২০২২ সালে।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে তাহরিনা ইংলিশ চ্যানেল পার হন। তারপর থেকেই চেষ্টা চালাতে থাকেন জিব্রাল্টার পার হওয়ার। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেটা সম্ভব হয়নি। ২০১৬ ও ২০১৭ সালে আর্থিক কারণেই লক্ষ্যপূরণের দিকে এগোতে পারেননি। ২০১৮ সালে সব ব্যবস্থা হয়ে যাওয়ার পরও ভিসা না পাওয়ায় যেতে পারেননি। আর এবার প্রতিবন্ধকতা তৈরি করল করোনা। তাহরিনা বললেন, ‘জিব্রাল্টার আমি পার হবই। তার আগে জল ছাড়ছি না। এবারও যেতে পারলাম না। সামনের বছরের জন্য তৈরি হব। সেটাও যদি না হয়, তার পরের বছর।’
যদিও এর মাঝে দু-বছর সাফল্য পেয়েছেন বাংলাদেশের বাংলা চ্যানেলে। প্রথমবার সিঙ্গল ক্রস। পরেরবার ডাবল ক্রস। দুটিতেই গড়েছেন রেকর্ড। ভাইরাসের আশঙ্কায় জলে নামতে পারছেন না। কিন্তু বাড়িতে ফিজিক্যাল ট্রেনিং করছেন। সপ্তাহে দু’দিন কলকাতায় আয়কর ভবনে অফিসে আসছেন। আর বাকিটা নিজেকে ডুবিয়ে রেখেছেন গিটারে, ছবি আঁকায়। মহেন্দ্র সিং ধোনির জন্মদিনে নিজের আঁকা ধোনির ছবি দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। লিওনেল মেসির ক্ষেত্রেও তাই। এরকম টাটকা নানা বিষয় নিয়ে ছবি এঁকে চলেছেন। যেমন কেরালায় গর্ভবতী হাতি হত্যার পরও এঁকেছিলেন তার ছবি। ওঁর আঁকা এসব ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশংসিতও হয়েছে।