শেষ প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন ২০১৮ সালে। তারপর কাঁধের চোটের জন্য ২০১৯-এর পুরোটাই ছিলেন প্রতিযোগিতার বাইরে। চিকিৎসা চলছিল। এবছর থেকে আবার কম্পিটিশনে নামবেন, এরকমই ঠিক ছিল। কিন্তু করোনার ধাক্কায় সব প্রতিযোগিতাই তো বাতিল। শুধু তাই নয়, ভারতের বিশিষ্ট সাঁতারু সায়নী ঘোষ আর জলেই নামতে পারেননি। করোনা-আতঙ্কের সময়েই শুধু নয়, তার অনেক আগে থেকেই তাঁর জলে নামা বন্ধ রয়েছে। একসময় সাঁতারের জন্য গোয়াতে থাকতেন। কাঁধের চোটের কারণেই সেখান থেকে চলে আসেন গত বছরের জুলাই মাসে। কলকাতায় ফেরার পর চিকিৎসার পাশাপাশি আস্তে আস্তে যাদবপুরে আকবর আলি মিরের কাছে অনুশীলন শুরু করেছিলেন। চোট সারিয়ে সাবলীল হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু বার্ষিক জল বদলের জন্য নভেম্বরে সেই সুইমিং পুল বন্ধ হয়ে যায়। নতুন বছরে আবার যখন শুরু করবেন, তখনই করোনার আগমন। ফলে সেই নভেম্বর থেকেই সায়নী অনুশীলনের বাইরে।
সায়নী বললেন, ‘সব পরিকল্পনাই ভেস্তে গেল। যখন পুরো লকডাউন ছিল তখন তো বালির বাড়িতে বসে হতাশায় সময় কাটানো ছাড়া কোনও পথ ছিল না।’ এখনও সুইমিং পুল না খোলায় জলে নামতে পারছেন না। কিন্তু বালি থেকে সপ্তাহে তিন দিন সোদপুরে জিমে যাচ্ছেন। বললেন, ‘লকডাউনের সময় বাড়িতে সামান্য ফিজিক্যাল ট্রেনিং করেছি। এখন সোদপুরের জিমে গিয়ে চিরঞ্জিৎদা (চিরঞ্জিৎ মাকাল), সিদ্ধার্থদার (সিদ্ধার্থ দাস) কাছে ট্রেনিং করছি।’ লকডাউন শুরুর ঠিক আগেই চাকরি পেয়েছেন। সপ্তাহে দু-দিন অফিসেও (ইনকাম ট্যাক্স) যাচ্ছেন। ফলে মোটামুটি সময় কেটে যাচ্ছে।
সায়নীর বাবা শ্যামল ঘোষের ফাস্টফুডের একটা ছোট দোকান আছে। লকডাউনের শুরু থেকেই সেই দোকান বন্ধ। আনলকের সময়েও খদ্দের পাওয়া যাবে না, এই আশঙ্কায় দোকান আর খোলেননি। পরিবর্তে সংসার চালাতে লকডাউনের সময় থেকেই বাড়ির সামনের রাস্তায় বিস্কুট, কেক, দুধ বিক্রি শুরু করেন। সায়নী বলছিলেন, ‘বাবার সঙ্গে আমিও ফুটপাতের ওই দোকানে দুধ, কেক, বিস্কুট বিক্রি করেছি। কয়েকবার পুলিশের তাড়া খেয়ে মালপত্তর তুলে নিয়ে পালাতেও হয়েছে।’ আর পুরো লকডাউন থাকাকলীন সময় কাটিয়েছেন কখনও গান শুনে, কখনও সিনেমা দেখে। বললেন, ‘হিন্দি, বাংলা দু-রকম গান শুনতেই ভাল লাগে। সিনেমাও তাই। এছাড়া ছোটবেলা থেকেই পেপার কেটে নানারকম হাতের কাজ করতে ভাল লাগে। সেসবও করেছি। রান্নায় মা-কে হেল্প করেছি। এভাবেই কেটে গেছে লকডাউনের সময়। এখনও অফিসে আর জিমে যাওয়ার দিনগুলো বাদ দিলে ওই কাজগুলো করছি।’
কবে আবার কম্পিটিশনে নামতে পারবেন, জানেন না সায়নী। বললেন, ‘করোনায় সবারই ক্ষতি হল। আমার ক্ষতির পরিমানটা অনেক বেশি। অনেকদিন ধরে প্র্যাকটিসে না থাকায় আবার ছন্দে ফিরতে অনেক বেশি সময় লাগবে। অনেক কঠিন লড়াই করতে হবে।’
দুধ, বিস্কুট বিক্রি করতে গিয়ে পুলিশের তাড়াও খেয়েছেন সায়নী -নির্মলকুমার সাহা

