প্রথমে লকডাউন, পরে আনলক। করোনাকালের এই কঠিন পরিস্থিতিতে খেলার মাঠের প্রাক্তন-বর্তমান অনেক খেলোয়াড়ই নানা সমস্যায় জর্জরিত। সময় কাটাতে, মন ভাল রাখতে অনেকে ডুবে থাকছেন অন্য কাজে। অনেকে যেন ছোটবেলায় ফিরে গিয়ে রঙ-তুলি নিয়েও বসে পড়ছেন ছবি আঁকতে। এর উল্টোটাও আছে। যেমন প্রাক্তন অ্যাথলিট বনানী বিশ্বাস। গত বছর তিনেক ধরে ছবি আঁকাই যাঁর অন্যতম ভাললাগা, তিনি এই করোনাকালে নিজেকে অনেকটা সরিয়ে রেখেছেন ছবির জগৎ থেকে।
কেন? বনানী বলছিলেন, ‘মন ভাল না থাকলে, ইচ্ছে না করলে আমি ছবি আঁকতে বসতে পারি না। এখন সত্যি আমার মন ভাল নেই। করোনায় কয়েকজন কাছের মানুষ মারা গেলেন। অনেকে অসুস্থ। সময়টা একেবারেই ভাল যাচ্ছে না। মন এখন অস্থির। কিছুই ভাল লাগছে না। আমি এই অস্থির মন নিয়ে ছবি আঁকতে পারি না।’
দুর্গাপুরের মেয়ে বনানী একসময় অ্যাথলেটিক্সে রাজ্য ও জাতীয় পর্যায়ে সাফল্য পেয়েছেন। ৮০০ মিটার দৌড় ছিল প্রিয় ইভেন্ট। এছাড়া ৪০০ ও ১৫০০ মিটারও দৌড়তেন। প্রতিযোগিতামূলক অ্যাথলেটিক্স থেকে অবসর নেন ২০০৩ সালে। তারপরও নিজের অফিস CGST & Central Excise-এর হয়ে অফিস মিটে অংশ নিয়েছেন।
ছোটবেলায় অনেক ছেলেমেয়েকেই পাড়ার আঁকার স্কুলে ভর্তি হতে দেখা যায়। বনানী ওই দলের নন। কোথাও কখনও আঁকা শেখেননি। বনানী বলছিলেন, ‘কখনও ছবি আঁকা না শিখলেও অন্যদের আঁকা ছবি দেখতে আমার খুব ভাল লাগত। খেলাধুলোর জন্য যখন কলকাতায় থাকতে শুরু করি, বিভিন্ন জায়গায় ছবির প্রদর্শনী দেখতে যেতাম। এখনও যাই। এভাবেই একদিন ছবি আঁকার নেশায় পড়া। তিনবছর হল ছবি আঁকছি।’
বনানীর ছবি আঁকা মানে মূলতঃ পেন্সিল স্কেচ। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা ওঁর আঁকা ছবি এরই মধ্যে অনেকের প্রশংসা পেয়েছে। এছাড়া নানারকম ফেব্রিকের কাজেও ওঁর আগ্রহ রয়েছে। ফেসবুকে সেগুলোও প্রশংসিত।
আর ভালবাসেন ছবি তুলতে। ১৯৯৮ সালে বেঙ্গালুরুতে জাতীয় শিবিরে যখন যান বাবা অজিতকুমার বিশ্বাসের দেওয়া টাকায় কিনেছিলেন একটা ক্যামেরা। সেই ক্যামেরা দিয়েই ছবি তোলা প্রথম শুরু। তারপর যত সময় গেছে আরও উন্নত ক্যামেরা কিনেছেন। ছবি তোলাটাকে জীবনের অঙ্গ করে নিয়েছেন।
বনানী বলছিলেন, ‘ছবি আঁকা যেমন কারও কাছে শিখিনি, ছবি তোলার শুরুটাও একেবারেই নিজে নিজে। অনেক পরে অবশ্য এব্যাপারে মূল্যবান নানা পরামর্শ, উপদেশ পেয়েছি আমার অফিসের সহকর্মী বিশিষ্ট ফটোগ্রাফার অমিতাভ চন্দ্রর কাছ থেকে। কোন অ্যাঙ্কেল থেকে ছবিটা ভাল হবে, কতটা দূর থেকে ছবি তুলতে হবে, এরকম আরও অনেক পরামর্শ দিয়েছেন উনি।’
সোশ্যাল মিডিয়ায় বনানীর আঁকা ছবির মতো তোলা ছবিও প্রশংসিত। বনানী প্রকৃতিপ্রেমী। বছরে বার তিনেক বেড়াতে যাওয়া চাইই। সেটা প্রকৃতির টানেই। কাঁধে তখন ক্যামেরা সবসময়ের সঙ্গী। সফরের প্রায় পুরো সময় কেটে যায় ছবি তুলতে তুলতেই। একসময় গান শিখবেন ঠিক করেছিলেন। কিনে ফেলেছিলেন হারমোনিয়াম। তবে ছবির আকর্ষণে গান নিয়ে আর মেতে ওঠা হয়নি। এনিয়ে ওঁর অবশ্য কোনও আপসোস নেই। ছবির জগতেই দিব্যি আছেন বনানী বিশ্বাস।