অদিত্রি দাস চক্রবর্তীর বয়স সবে মাত্র ১০ মাস। এবার প্রথম পুজো। কিন্তু মা-বাবা সাজিয়েগুজিয়ে প্যান্ডেলে নিয়ে যেতে পারবেন না শিশু কন্যাকে। অদিত্রির এখনও বোঝার বয়স হয়নি। কিন্তু ওর মা বিখ্যাত টেবিল টেনিস তারকা মৌমা দাসের মন একটু হলেও খারাপ, মেয়ের জন্য। মৌমা বলছিলেন, ‘প্রথম বছরের পুজোর আনন্দটাই ওর মাটি হয়ে গেল। পুজো কী, সেটা বোঝার বয়স না হলেও আলো, ঢাকের শব্দ, লোকজন দেখে নিশ্চয়ই মজা পেত। কিন্তু করোনায় যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে, তাতে ওকে নিয়ে বের হওয়া কঠিন। ভেবে রেখেছি, হয়ত একদিন ঘণ্টাখানেকের জন্য গাড়িতে নিয়ে গিয়ে কাছাকাছি কোনও পুজোর ঠাকুর দেখিয়ে আনব। গাড়ি থেকে নামা সম্ভব নয়। গাড়িতে বসেই। মেয়ে ঠাকুর দেখল, নিয়মরক্ষা করা আর কী!’
টেবিল টেনিস তারকা মৌমা দাসের মেয়ে আদিত্রি কাঞ্চন চক্রবর্তী , মৌমা দাস ও মেয়ে অদিত্রি
এরপর মৌমা যোগ করলেন, ‘‘খেলা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় অন্যদের মতো আমার দিনরাত ঠাকুর দেখা কখনও হয়নি। সম্ভব ছিল না। পুজোর সময়ও প্রতিদিন একবেলা প্র্যাকটিস করেছি। আরেকবেলা পুজোর আনন্দ। এবার সেটাও মিস করব। তবে আমার নিজের জন্য নয়, মন খারাপ লাগছে মেয়ের জন্যই।’’
মৌমার শ্বশুর বাড়ি আর বাপের বাড়ি, মধ্যমগ্রামে কাছাকাছিই। গত বছর ১৩ ডিসেম্বর মেয়ের জন্ম। তারপর শ্বশুরবাড়িতেই ছিলেন মৌমা। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি বাপের বাড়িতে যান। সেখানে থাকাকালীনই লকডাউন শুরু হয়। কাছাকাছি হওয়া সত্ত্বেও শিশু সন্তানকে নিয়ে এ বাড়ি-ও বাড়ি করতে চাননি। অবশেষে একমাস আগে আবার ফিরেছেন শ্বশুর বাড়ি। মৌমা বললেন, ‘মেয়ের দশ মাস বয়স হল। বাইরের আলো-বাতাসের মজাই পেল না। করোনা-আতঙ্কের জন্য ঘরেই আটকে আছে। বাড়ির বাইরে পার্কে ঘোরাতে নিয়ে যাওয়ারও উপায় নেই। আত্মীয়-স্বজনরা কেউ ওকে দেখতেও আসতে পারছে না। আমিও কোথাও নিয়ে যেতে পারছি না। বাড়ির কয়েকজন ছাড়া সবাই এখনও ওর কাছে অপরিচিত।’
একটু থেমে মৌমা বললেন, ‘কিছু করার নেই। যেভাবে করোনা ছড়াচ্ছে, ছোট-বড় সবাইকেই সতর্ক থাকতে হচ্ছে। ভ্যাকসিনের জন্য কয়েকবার ওকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হয়েছে, খুব সতর্ক থেকেই। এছাড়া পুরোটাই বাড়িতে।’শুধু শিশুকন্যা নয়, বাড়িতে আটকে মৌমা দাস চক্রবর্তীও। কাঞ্চন চক্রবর্তীর সঙ্গে বিয়ের পর পুরো নাম এভাবেই লেখেন মৌমা। শুধু তাই নয়, মেয়ের নামের সঙ্গেও মা-বাবা দু’জনের পদবি জুড়ে দিয়েছেন।
মৌমা বললেন, ‘অফিসে যাওয়া নেই, প্র্যাকটিস নেই। এমনিতে অফুরন্ত সময়। কিন্তু কীভাবে কেটে যাচ্ছে, বুঝতে পারছি না। পুরো সময়ই এখন মেয়ের জন্য।’ পাঁচবারের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন, অলিম্পিয়ান মৌমা ঠিক করেছিলেন, আস্তে আস্তে অনুশীলনে ফিরবেন। কিন্তু করোনাকালে সেটা এখনও সম্ভব হয়নি। তবে বাড়িতে টুকটাক শরীরচর্চা করছেন।
বললেন, ‘অনেকেই জানতে চান, খেলা ছেড়ে দিচ্ছি কিনা? কোচিংয়ে আসছি কিনা? পরিস্কার বলছি, আমার এখনই খেলা ছাড়ার কোনও পরিকল্পনা নেই। বাপের বাড়ি, শ্বশুর বাড়ি, অফিসের সাপোর্ট পাচ্ছি। কেন খেলা ছাড়তে যাব? ভালভাবেই আবার খেলায় ফিরতে চাইছি। আর কোচিং করাব কিনা, তা নিয়ে এখনও কিছু ভাবিনি। ভাবার সময় আসেনি।’ মেয়েকে নিয়ে ব্যস্ত থাকার মাঝেও নিয়মিত কোচ জয়ন্ত পুশিলালের সঙ্গে ফোনে কথা হয়। কথা বলেন জার্মানিতে কোচ Peter Engel-এর সঙ্গে। ফেরার লড়াই কীভাবে শুরু করা যায়, পরামর্শ নেন।