দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরোঃ ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে পিছিয়ে পড়া ওয়ার্ডগুলিতে এবার নয়া রণকৌশল তৃণমূলের। এই ওয়ার্ডগুলো থেকে দলকে লিড এনে দিতে পারলে তৃণমূল কাউন্সিলারদের ১ কোটি টাকা পুরস্কার দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।
বৃহস্পতিবার তৃণমূল ভবনে হওয়া বৈঠকে এই ঘোষণা করেন ফিরহাদ হাকিম। তাঁর ঘোষণা,কলকাতা পৌরসভা অঞ্চলে যে ওয়ার্ডগুলোয় তৃণমূল কংগ্রেস পিছিয়ে রয়েছে, সেখান থেকে যে যে কাউন্সিলর লিড এনে দিতে পারবেন, তাদের প্রত্যেককে এই প্রাইজমানি উপহার হিসাবে দেওয়া হবে। উল্লেখ্য,২০২১—এর বিধানসভা নির্বাচনে কলকাতায় প্রতিটি ওয়ার্ডে জয় নিশ্চিত করতে চাইছে তৃণমূল। তাই এদিন পিছিয়ে পড়া ওয়ার্ডগুলোতে লিড নিতে এই পরিকল্পনা নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।আর তৃণমূলের এই ঘোষণাকে পাল্টা আক্রমণ করতে ছাড়েনি বিরোধীরা।
ফিরহাদ হাকিম-এর এই মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করে বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য কটাক্ষ করেন, ‘তৃণমূল কোনও রাজনৈতিক দল নয়। এটা তো ভোটে জেতানোর কন্ট্রাক্ট দেওয়া হচ্ছে।দেউলিয়াপনা কোন পর্যায়ে পৌঁছলে, তবে একটা দল এভাবে কন্ট্রাক্ট দিতে পারে! সাধারণত খুন করার জন্য যেমন সুপারি দেওয়া হয়, এটাও তেমন।’ এমনকী,এই ঘোষণার সমালোচনা করেছেন সিপিআইএম নেতা সুজন চক্রবর্তীও। তিনি বলেন, ‘ববির ওইভাবে টাকা দেওয়ার টোপ বেআইনি। কার টাকা দেবেন? কমিশনের উচিত ব্যবস্থা নেওয়া।’
আগামীকাল শুক্রবার প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। সেইকারণে ভোটের রণকৌশল ঠিক করতেই এদিন এই বৈঠকে বসে তৃণমূল-এর শীর্ষ নেতৃত্ব। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরও। তৃণমূল ভবনে হওয়া এদিনের বৈঠকে উপস্থিত নেতাদের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলেন অভিষেক বন্দোপাধ্যায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সী, ফিরহাদ হাকিম, অরুপ বিশ্বাস প্রমুখ। সেখানেই পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ঘোষণা করেন, ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে যেসব ওয়ার্ডে দল পিছিয়ে ছিল, সেখানে যদি এবার তৃণমূল কংগ্রেস লিড পায়, তাহলে এলাকা উন্নয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলরকে ১ কোটি টাকা করে দেওয়া হবে,যা জনকল্যাণে ব্যবহৃত হবে।
উল্লেখ্য, এদিনের বৈঠকে কলকাতার দলের কাউন্সিলরদের নির্দেশ দেওয়া হয়, ৭ মার্চ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আসার আগেই পুরো শহরকে ‘বাংলা নিজের মেয়েকে চায়’ এই ব্যানার ও তৃণমূলের পতাকা,ফেস্টুনে মুড়ে ফেলতে হবে। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ফ্ল্যাগ—ফেস্টুন লাগিয়ে নিজেদের শক্তির পরিচয় দিতে হবে। দল সকলের ওপর নজর রাখছে। কাউন্সিলররা যেন পুরো শক্তি দিয়ে প্রচারে নেমে পরেন। প্রত্যেক কাউন্সিলরকে ৫ হাজার করে রিপোর্ট কার্ড দেওয়া হবে। সেগুলি বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিলি করার কাজ সেই কাউন্সিলারকে করতে হবে বলে জানিয়েছে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব।
অবশ্য তৃণমূলের এই প্রাইজমানি ঘোষণা নতুন কিছু নয়।এর আগেও লোকসভা ভোটের সময় ওয়ার্ড পিছু ৫ হাজারের বেশি লিড এনে দিতে পারলে ১ কোটি টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন তৎকালীন আসানসোলের মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি। সেইসময় তার এই বক্তব্যের তুমুল সমালোচনা করেছিলেন বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়। যদিও পরিবর্তনের হওয়ায় গা ভাসিয়ে সেই জিতেন্দ্র তিওয়ারি আজ তৃণমূল ছেড়ে পদ্ম শিবিরে যোগ দিয়েছেন।
তবে ২০১৯-এর লোকসভার পর ২০২১—এর বিধানসভা নির্বাচনেও তৃণমূল কংগ্রেসের এই প্রাইজমানির ঘোষণা অব্যাহত থাকল।