দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরোঃ পশ্চিমবঙ্গের দ্বাদশ বিধানসভা নির্বাচন নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত হয়। এবারেও লোকসভা ভোটের সঙ্গেই রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন হয়েছিল। তবে দ্বাদশ বিধানসভা নির্বাচন নানান কারণে বঙ্গ রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য দিক হিসেবে থেকে গিয়েছে। বামফ্রন্ট পঞ্চম বারের জন্য সরকারে ফিরে আসলেও নির্বাচনী ফলে এই প্রথম তারা ব্যাপকভাবে ধাক্কা খায়। জনগণের একাংশের মধ্যে সরকার বিরোধী মনোভাব এতটাই তীব্র ছিল যে বামফ্রন্ট মোট প্রদত্ত ভোটের অর্ধেকেরও কম ভোট পায়। ৪৯.৩ শতাংশ ভোট পেয়ে তারা ২০৩ টি আসনে জয়লাভ করে।
এই বিধানসভা নির্বাচনে সবচেয়ে আকর্ষণীয় চেহারায় ছিল বিরোধী কংগ্রেস। জনগণের ক্ষোভ অনুমান করে কংগ্রেসের একাংশ মনে করেছিল দীর্ঘদিন পর তারা আবার রাজ্যের ক্ষমতায় ফিরে আসছে। তাই প্রার্থী হওয়া নিয়ে কংগ্রেসের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব চূড়ান্ত আকার ধারণ করে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রের সঙ্গে তৎকালীন যুব কংগ্রেস সভাপতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতা এমনই চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে পৌঁয় তারা পৃথক পৃথক প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস হাইকমান্ডের হস্তক্ষেপে কোনোরকমে পরিস্থিতি সামলানো যায়।
এই নির্বাচনে খুনের অভিযোগে জেলবন্দি অবস্থাতেই মুর্শিদাবাদের নবগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন কংগ্রেস প্রার্থী অধীর রঞ্জন চৌধুরী। জেলবন্দি অবস্থাতেই তার বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছিল। সেটাই বিভিন্ন পথসভা ও সমাবেশে বাজানো হতো। নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ পেলে দেখা যায় অধীর রঞ্জন চৌধুরী জয়লাভ করেছেন।


গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল দ্বাদশ বিধানসভা নির্বাচনে বামফ্রন্টের প্রধান শরিক সিপিআই(এম) ৭০ টি আসনে নতুন মুখদের প্রার্থী করে। যদিও এই নতুন প্রার্থীদের বেশিরভাগই নির্বাচনী লড়াইয়ে পরাজিত হয়। এছাড়াও বামফ্রন্টের দ্বিতীয় শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক নির্বাচনের আগে বিভাজিত হয়ে যায়। তৈরি হয় নতুন রাজনৈতিক দল ফরওয়ার্ড ব্লক (সোশালিস্ট)। সিপিআই(এম)-এর পাশাপাশি ফরওয়ার্ড ব্লকের ফল খারাপ হয় এই বিধানসভা নির্বাচনে। সিপিএমের ভোট শতাংশ সামান্য বাড়লেও মোট আসন সংখ্যা একধাপে অনেকটাই কমে গিয়ে হয় ১৫৩। মূলত কলকাতা ও সংলগ্ন শিল্পাঞ্চলে বামেদের ফলাফল সবচেয়ে খারাপ হয়েছিল। কংগ্রেস প্রার্থীরা জয়লাভ করেছিল ৮২ টি আসনে।