দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরোঃ পাহাড় প্রেম আজ আমাকে হিমালয়ের কাছে টেনে নিয়েছে , যেখান থেকে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জন্মায়। ঠিক এই জায়গা থেকে পথ চলা শুরু, আর তখন থেকেই ভেবেছিলাম সুযোগ পেলেই ডানা ঝাপটে উড়ে যাবো তারপর আর থেমে থাকা নয়। এবারে হিমালয় কে নতুন ভাবে দেখতে চাই , তাই বর্ষার রূপে পাহাড়ের সঙ্গে প্রেম করতে যাবো যেখানে নিঃশর্ত ভালোবাসা আছে , আছে রোমাঞ্চের ছোঁয়া আর আছে উপলব্ধির ছড়াছড়ি। তাই এক বর্ষার দিনে এই ছুটির ফাঁদে বেরিয়ে গেলাম সিকিমের মূলখারকা উদ্যেশে।
মেঘ বৃষ্টিকে সঙ্গে নিয়ে ট্রেন ধরে নিউ জলপাইগুড়ি। যেহেতু সময়টা বর্ষাকাল তাই পাহাড়ে পর্যটকের ভিড়ও নেই। তাই পাহাড়কে একদম নিজের করে পাওয়ার এই এই শ্রেষ্ট সময় । শিলিগুড়ি থেকে বাসে চেপে বসলাম। ভেজা ভেজা আঁকাবাঁকা পথে এগিয়ে চলেছি । পাশে বৃষ্টির জলে তিস্তার জল থৈ থৈ। এমন তিস্তার যৌবনের রূপের প্রেমে পড়ে গেলাম। হটাৎ বাস থেমে যায় নেমে দেখি বিশাল গাড়ির লাইন শুনলাম সামনেই আড়াই মাইল বস্তির কাছে ধস নেমেছে তাই রাস্তা বন্ধ । ঘড়িতে তখন প্রায় ১২ টা ছুঁই ছুঁই । ঠিক হলো অন্য পথে ২৪ কিমি দূরে তিস্তা বাজার গিয়ে উঠবো। অবশেষে দুপুর দুটোতে রংপো তে গিয়ে বাসের ইতি।
ঝপাঝপ নেমে শেয়ার জীপ ধরলাম মূলখারকা উদ্যেশে। এই শেয়ার জীপ্ রেনহাক পর্যন্ত যাবে তার পরে আবার স্থানীয় ল্যান্ডওভার করে ঘড়ি ঠিক সন্ধ্যার মুখে মূলখারকা (৭৩০০ ফিট) পৌঁছে গেলাম। চারিদিকে অন্ধকার তখন জাঁকিয়ে বসেছে সঙ্গে শীতল বাতাস। সামনেই পূর্ণিমা দির হোম স্টেতে আশ্রয় নিলাম। নিরিবিলি নিস্তবতার মধ্যে শুধু বৃষ্টির আওয়াজ শুনি ,বাহিরে তখন অঝরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ঠান্ডার প্রকোপ ও বাড়ছে। আমি ব্যাগ পত্তর রেখে রান্নাঘরে ঠাঁই নিলাম ওখানেই রাতের খাবার খেলাম আবার শরীরের উষ্ণতাও নিলাম। পূর্ণিমাদির অতিথিয়তার ও আন্তরিকতার যতই লিখি তা শেষ হবে না।


আজ মেঘ থমথম সকাল তবে পাহাড়ের উল্টো দিকে সাত রঙের ছটা নিয়ে রামধনুটি মন মাতিয়ে দিলো যা জীবনে ভুলবো না। সামনেই মূলখারকা লেক আকাশ পরিষ্কার থাকলে এই লেক তার উপর কাঞ্চনজংঘার প্রতিবিম্ব পড়ে। তার সামনেই আমি দাঁড়িয়ে একমনে দূরের পাহাড় টার দিকে তাকিয়ে থাকি। পাহাড়ের যে বর্ষার রূপ যে নিজে চোখে দেখে মনের গভীরে গেঁথে নিয়েছি। সে যেন আমার সঙ্গে কথা বলে , একটা অদৃশ্য সুতো আমাদের একসঙ্গে বেঁধে রেখেছে। আজ আমি তো একা নই আমার সঙ্গে আমার চিরদিনের সাথী আমার ভালোবাসার পাহাড় আছে , মনে হয় যতদূর দেখছি যেন সবাই আমার আত্মীয়। যাই হোক কাঞ্চনজংঘার দেখা পেলাম না তাতে কি হয়েছে আমি তো বর্ষার সঙ্গে পাহাড়ের মিলনের রূপ দেখতে এসেছি।


ঠিক করলাম হাঁটা পথে তাগাথান হয়ে জুসিং যাবো। সামান্য কিছু জলখাবার খেয়ে স্থানীয় একজন কে নিয়ে সরু পাহাড়ী পাকদন্ডী বেয়ে ভিজে জঙ্গলে মিলিয়ে গেলাম যেখানে গাছের পাতা থেকে এখনো টুপ্ টাপ জল পড়ে চলেছে , কত অজানা পাখির ডাক শুনতে শুনতে চলেছি , পাহাড়ের গায়ে কত রকমের নাম না জানা ফুল। আহা সত্যি এই সময় না আসলে এই অনুভুতিটা হয়তো পেতাম না। প্রায় ৪ ঘন্টা হাঁটার পর জুসিং পৌঁছে গেলাম বেদু দাদার হোম স্টে তে। উনি কিছুটা অবাক হলেন এই সময় তো তেমন কেউ আসে না , মনে ভাবতেও পারে হয়তো প্রকৃতি পাগল মানুষ আমি। বেদু দার হাতে গরম গরম মোমো আর কফিতে ক্লান্তি একেবারে চনমনে।
দুপুর গড়িয়ে তখন বিকেলের দিকে ছোট জুসিং গ্রামের আনাচে কানাচে ঘুরতে বেড়িয়েছি। সত্যি এই সুন্দর সাজানো গ্রামের মানুষদের আন্তরিকতা ও আতিথেয়তা সত্যি সুন্দর মনে হয়ে এখানেই কয়েকটা দিন কাটিয়ে দিই। এখানে নেপালী ,তিব্বতি সব মিলেমিশে বেশ আছে ওরা। প্রায় প্রত্যেক বাড়িতে এলাচ জাতীয় গাছে ভর্তি। এরা চাষবাস ও পশুপালন করে জীবিকা অর্জন করে । সন্ধে তখন রাতের দিকে চারিদিকে সুনসান , বৃষ্টি শুরু হয়েছে আমি তখন মোমবাতির আলোয় কাঠের বারান্দায় বুঁদ হয়ে বসে আছি আর সারা দিনের ছায়াছবি মনের মধ্যে দেখতে থাকি আর লিখতে থাকি। হটাৎ বেড়ুদার ডাক রাতের খাবার রেডি গরম গরম রুটি আর মাংস।
পরের দিন ওখান থেকে ছোট গাড়ি করে আবার নিউ জলপাইগুড়ি সেখান থেকে ট্রেনে কোলকাতা তবে এই ৩-৪ দিন অনেকে কিঁছু পেয়েছি যা আমার পরবর্তী পাথেয় হয়ে থাকবে।